অভিযুক্ত ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আয়শা ইসলাম মীম /ছবি- সংগৃহীত

ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর থেকে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার অবৈধ শিক্ষার্থী রাখার প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীর গায়ে গরম চা ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আয়শা ইসলাম মীমের বিরুদ্ধে। তিনি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভার অনুসারী।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ইডেন কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাসের ৩১৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

গত মে মাসে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকেই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেত্রীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে।

গত ২০ আগস্ট ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা একটি ছাত্রীনিবাসের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীকে তাদের রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় তামান্নার হুমকি দেওয়ার একটি অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সেখানে ছাত্রীদের তামান্না ‌‘এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু’ বলে শাসাতে শোনা গেছে।

এই অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে ক্ষমা চাইলেও পুষে রাখা রাগ কমেনি রিভার। তিন দিন পরই নতুন বিতর্কে জড়ান এই নেত্রী। এবার দুই ছাত্রীকে ৭ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন ও নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকির অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে।

বিতর্কের তালিকায় নতুন সংযোজন তামান্নার অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আয়শা ইসলাম মীম। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলওয়ার শাহজাদার স্ত্রী বলে জানা গেছে। এবারের ঘটনার সূত্রপাত, রিডিং রুমে অবৈধ ছাত্রীদের টেবিল রাখা নিয়ে।

ভুক্তভোগী ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ইডেন কলেজের শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাসের রিডিং রুমে পড়তে যান কলেজ ছাত্রী ঐশী। রিডিং রুমের সামনে গিয়ে দেখেন প্রবেশমুখে একটি টেবিল বসানো। টেবিলটি বসিয়েছেন অন্য একটি মহিলা কলেজের অবৈধ কয়েকজন ছাত্রী, যারা মীমের ছত্রছায়ায় ইডেনের ছাত্রীনিবাসে থাকে। প্রবেশমুখে টেবিল বসানোর কারণে ভেতরে ঢুকতে অন্য ছাত্রীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল। ফলে ঐশী ওই ছাত্রীদের টেবিল সরাতে বলেন। কিন্তু তারা তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি।

এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী তাদের বলে, ‘আপনারা অবৈধ হওয়ার পরও ইডেনের হলে থাকেন কেন? আবার টেবিল সরাতে বললেও সরান না।’ এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীরা তাকে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়ে চলে যায়। 

ওই দিন সন্ধ্যায় শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের ৩১৩ নম্বর কক্ষে বসে চা পান করছিলেন ঐশী। এ সময় ওই ছাত্রীদের নিয়ে তার কক্ষে আসেন অভিযুক্ত মীম। কেন তার মেয়েদের (অনুসারীদের) সঙ্গে তর্কে জড়াল এ নিয়ে ঐশীকে গালাগাল করতে থাকেন মীম। এক পর্যায়ে ঐশীর হাতে থাকা গরম চা তারই গায়ে ঢেলে দিয়ে চলে যায় মীম।

কিছুক্ষণ পর ওই ছাত্রলীগ নেত্রী আবার ঐশীর কক্ষে আসেন। এ ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে ঐশীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে সে চলে যায়।

ভুক্তভোগী ঐশী বলেন, মীম আপুর বহিরাগত মেয়েরা রিডিং রুমে যাতায়াতের পথে টেবিল রেখে সেখানেই পড়তো। তাদের বলেছি আপু, আমরা এখান দিয়ে যাওয়া-আসা করি, টেবিল সাইড করে রাখলে ভালো হয়। তারপরও তারা সাইড করেনি। সেকেন্ড টাইম বলার পর তারা চেঁচামিচি শুরু করে। তখন আমি তাদের বলি, অবৈধ মেয়ে হয়ে এত কথা বলেন কেন? এটা শুনে তারা আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। 

তিনি বলেন, সন্ধ্যায় আমি চা খাচ্ছিলাম। মীম আপু আমার রুমে এসে আমার গায়ের ওপর চা ঢেলে দিয়ে রুমে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে। আমি ভয় পেয়ে কাউকে বের হতে দেইনি। পরে তিনি আমার হাত ধরে মোচড় দেয়। এতে আমার হাত মচকে যায়। আমি ম্যামদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবে বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আয়শা ইসলাম মীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার একজন মেয়ের (অবৈধভাবে থাকা ছাত্রী) সঙ্গে লিগ্যাল একজনের (সাধারণ ছাত্রী) কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর বেশি কিছু হয়নি। গরম চা ঢেলে দেওয়ার মতো কিছু হয়নি।

ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, আমরা ঘটনা শুনেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এএজে/ওএফ