সামিয়া আক্তার বৈশাখি

ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। অনশন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আবারো আন্দোলনে নামতে পারেন তারা।

দাবির বিষয়ে তারা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানাবেন। এতে কাজ না হলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে যাবেন। তাতেও কাজ না হলে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হবেন।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি।

তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভাইয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সময় দেননি। সেজন্য আমরা আবার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বসব। দলীয় মহলে আলোচনা করব। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে যাব। তারা কোনো সমাধান দিতে না পারলে পার্টির সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের কাছে যাব। তিনিও যদি কোনো সমাধান দিতে না পারেন, তাহলে প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব।

অনশন স্থগিত ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কী ঘটনা ঘটেছে— জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এর আগে সোমবার সকালে ইডেন কলেজ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন বহিষ্কৃত ১৬ নেত্রীর ১২ জন। এসময় তারা বহিষ্কার হওয়া বাকি চারজনকে চেনেন না বলে জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে এ নেত্রীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনশনের জন্য যান।

কিন্তু ভেতর থেকে দেড় ঘণ্টা পর বেরিয়ে তারা জানান, আমরণ অনশন বাতিল করা হয়েছে। নতুন কোনো কর্মসূচিও নেই। কেন অনশন বাতিল করলেন, রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কে কে ছিলেন— জানতে চাইলেও তারা কোনো উত্তর দেননি।

দুই পক্ষের রেষারেষি ও মারামারির ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৬ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

সেইসঙ্গে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে, প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ এর সহ-সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ে, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা ও সূচনা আক্তারকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে ‘সিট বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির’ অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সংগঠনটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করার অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একাংশের বিক্ষোভে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা রীভা ও রাজিয়ার বহিষ্কারের দাবি জানান। পরে রোববার দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ আসে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে। 

তদন্ত কমিটির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে রোববার দুপুরে বিরোধী পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। পরে বিকেলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করতে এলে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুইপক্ষ। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন।

১৬ জনকে বহিষ্কারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ বিশৃঙ্খলার সঙ্গে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এএজে/আরএইচ