বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে প্রতি মঙ্গলবার সপ্তাহে একদিন অনলাইনে ক্লাস নেওয়া ও পরিবহন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন। গত ৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এমনকি কোনো কোনো বিভাগ গেল দেড় মাসেও অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

অনলাইন ক্লাস প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ করেন। তাদের অধিকাংশের মতে, সপ্তাহে একদিন অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত এক ধরনের বিলাসিতা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত না নিলেও পারতো। 

তাদের মতে, করোনার কারণে ইতোমধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রমে ৬ থেকে ১০ মাসের ক্ষতি হয়েছে। তা কাটিয়ে ওঠার সময় আবার প্রশাসনের এ রকমের সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত? 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের প্রতিটি বিষয়ে ল্যাব থাকে, যা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে করা সম্ভব নয়। আর অফলাইনে যে ক্লাসগুলো হওয়ার কথা তার তিন ভাগের একভাগও হয় না। করোনার সময় পরিস্থিতির কারণে অনলাইন ক্লাসের যে আগ্রহ ছিল সেটাও এখন আর নেই। প্রশাসন যদি স্বাভাবিক নিয়মে সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে সেশনজটের মতো ভয়াবহ অবস্থা হবে না।

এদিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জবি শাখার সহ-সভাপতি সুমাইয়া সোমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে ক্যাম্পাস যখন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ঠিক তখনই জবি প্রশাসন প্রতি মঙ্গলবার অনলাইনে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনলাইন কার্যক্রমের ফলে শিক্ষাদান হুমকির মুখে। আমরা শুরু থেকেই অনলাইন ক্লাসের বিপক্ষে। কারণ, স্বাভাবিক জনজীবনে অনলাইন ক্লাস শিক্ষা-বাণিজ্যের হাতিয়ার। প্রশাসন অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের একটি শ্রেণিকে লাভবান করছে। জবি প্রশাসন যে শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বরং শিক্ষার্থীপ্রতিবন্ধক তা বারবার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করছে। অনলাইন নয়, অবিলম্বে শ্রেণিকক্ষে পাঠ্যক্রম শুরুর দাবি জানাচ্ছি। 

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেলে ২৫ শতাংশ ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে শিক্ষকদের মতামত নিয়ে সাময়িকভাবে সপ্তাহে একদিন অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিই। অফলাইন রুটিনে যে সময় উল্লেখ করা আছে সে সময়ই ক্লাসগুলো নিতে হবে। 

তিনি বলেন, এখন যদি শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস না চায় তাহলে আমরা পুরোনো নিয়মে সপ্তাহে দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) বন্ধ রেখে বাকি পাঁচ দিন ক্লাস নেওয়ার জন্য উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলব। 

এ বিষয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার মতামত জানা যায়নি।

ওএফ