ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মঙ্গলবার বিকেলে তার কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। যাওয়ার পথেই হামলার শিকার হন তারা। 

ছাত্রদল বলছে, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ বলছে, হামলার ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। সংগঠনটি উল্টো হামলার শিকার ছাত্রদলের ওপরই দোষ চাপিয়ে বলছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ।

ঢাবি ছাত্রদলের ওপর সেদিনের সেই হামলার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম শাহরিয়ার মুনের নেতৃত্বে সংগঠনের বেশ কজন নেতাকর্মীকে মারমুখী অবস্থায় স্পষ্ট দেখা গেছে।

প্রথম ছবি

ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণে দেখা যায়, (প্রথম ছবিতে) এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ ছাড়াও হামলায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক লাভলু রহমান (প্রশ্নপত্র ফাঁসে বহিষ্কৃত), হল ছাত্রলীগের কর্মী হারুনুর রশীদ হৃদয় ও মেহেদি হাসান।

(দ্বিতীয় ছবিতে) হামলায় অংশ নিতে দেখা যায় এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ হল ছাত্রলীগের কর্মী আসিফ মাহমুদ, ওবায়দুল হোসাইন, মোহাম্মদ শওকত, মিশকাত কবির, আকিল, বাঁধন, বিল্লাল। তাদের প্রায় সবার হাতেই লাঠিসোঁটা রয়েছে।

দ্বিতীয় ছবি

(তৃতীয় ছবিতে) হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়, সভাপতি রিয়াজ, কর্মী আজিজুল হক, আবির, সামিউজ্জাম সামি, আসিফ মাহমুদকে।

এ ছাড়া ছাত্রলীগকর্মী মহিবুল্লাহ লিয়ন, আলী হাসান রিফাত, তানভীর হাসান শান্ত, মোমিন, মেহেদি হাসান শান্ত, আলভী, সোলাইমান এ হামলায় সামনের দিকে ছিলেন  বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তৃতীয় ছবি

স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম শাহরিয়ার মুন লাঠি হাতে থাকার কথা ঢাকা পোস্টের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে তারা বলছেন,  ছাত্রলীগের এক কর্মীকে প্রথমে মারধর করায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও হলের কর্মীরা তাদের (ছাত্রদলের) ওপর চড়াও হন। পরে মীমাংসা করতেই তারা সেখানে যান।

আরও পড়ুন :  ক্ষমতার ছড়ি ছাত্রলীগের হাতে

ছবিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলা করতে দেখা গেলেও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস দাবি করেছেন, হামলায় ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি বলেন, আমার কাছে তথ্য রয়েছে— ছাত্রদলে ছয়টি গ্রুপ রয়েছে। তারা নিজেরা প্রতিহিংসা করে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছে। ছাত্রলীগকে কুলষিত করার জন্য তারা স্লোগান দিয়ে নিজেরা নিজেরা হামলায় জড়িত হয়েছে। সুতরাং তারা মিথ্যাচার করছে। এখানে ছাত্রলীগের বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই।

ঘটনার দিন বিভিন্ন মোড়ে ছাত্রলীগের অবস্থান

জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এর সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিচ্ছিন্ন কোনো ছবি দিয়ে কিছু প্রমাণ করার সুযোগ নেই।

ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন শুনে ঘটনার দিন শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকট সমাধানে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। পাশাপাশি তারা ছাত্রদলকে প্রতিহত করার ঘোষণাও দেয়। আগে থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তাদের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন। এতে ছাত্রদলের অন্তত ১০ জন আহত হন।

এ ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এইচআর/আরএইচ