ক্যাম্পাসে ঢুকতেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আজ বিকেলে ছাত্রদলের ওপর যে হামলা হয়েছে এতে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না বলে দাবি করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। 

সনজিত এমন দাবি করলেও হামলার ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে স্যার এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনের বেশ ক’জন নেতাকর্মীকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। 

আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করতে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন ছাত্রদলের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী। সেখানেই লাঠি ও স্টাম্প নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্রদলের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন। 

হামলার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। ছাত্রদলের চামড়া তুলে নেব আমরা, জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়, ছাত্রদলের আস্তানা, এই ঢাবিতে হবে না;  হই হই রই রই, ছাত্রদল গেলি কই, ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।  

এরপর বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সনজিত চন্দ্র দাস দাবি করেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রদল নিজেরাই মারামারিতে জড়ায়।

সনজিত বলেন, ছাত্রদল অছাত্রদের সগঠন। তাদের কী কর্মসূচি আছে বা কী নেই, এটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা আজকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্য স্যারকে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের সব নেতাকর্মী এখানেই ছিল। বাইরে যারা দাবি করছে যে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করেছে আসলে তাদের একটা ফোবিয়া হয়েছে যে, তারা যেখানেই মার খায়, ধরপাকড়ের শিকার হয়, তারা মনে করে ছাত্রলীগ তাদের মেরেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি তারা নীলক্ষেত মোড়ে রাস্তাঘাট আটকেছে। সাধারণ জনতার সাথে সাধারণ ছাত্ররা তাদের গণধোলাই দিয়েছে। এখানে ছাত্রলীগের দায় কেন হবে? ছাত্রলীগের সবাই এখানে উপাচার্যের কার্যালয়ের আশপাশে রয়েছে। আমাদের কনসার্নের বাইরে গিয়ে আমাদের কর্মীরা কোনো ধরনের কাজ করে না। সুতরাং ওরা মিথ্যাচার করছে। এখানে ছাত্রলীগের বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। 

জয় বাংলা বলে হামলা হয়েছে- একজন সাংবাদিক এ বিষয়টা জানালে তিনি বলেন, আমার কাছে তথ্য রয়েছে ছাত্রদলের ছয়টি গ্রুপ রয়েছে। তারা নিজেরা প্রতিহিংসা করে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়েছে। তাছাড়া জয় বাংলা এখন জাতীয় স্লোগান। ছাত্রদল করে বলে জয় বাংলা বলতে পারবে না এটা ঠিক না। নিজেরা কোন্দল করেছে। ছাত্রলীগকে কলুষিত করার জন্য ওরা জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে নিজেরা নিজেরা মারামারিতে জড়িত হয়েছে।  

আরও পড়ুন : মাথা ফেটেছে ছাত্রদল সভাপতির, হাত ভেঙেছে সম্পাদকের

ছাত্রদলের ওপর হামলা হওয়ার পর বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।

হামলায় স্যার এ এফ রহমান হলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে জানালে তিনি বলেন, যারা প্রোগ্রামে এসেছে তারা হলে ফেরার পথে যদি আপনারা তাদের ফুটেজ নিয়ে হামলা করেছে বলেন! ছবি থাকলে থাকুক। ছাত্রলীগের কেউ এই হামলার সাথে জড়িত না। আমরা জানি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এই মারামারি।

কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটল কি না সেটা দেখতে হবে : উপাচার্য
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সবাই আমাদের কাছে শিক্ষার্থী, কে কোন সংগঠন করবে সে স্বাধীনতা আছে। গতকাল ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদল দুই সংগঠনেই দেখা করার জন্য সময় চেয়েছে। ছাত্রলীগকে ৩টায়, ছাত্রদলকে ৪টায় সময় দেওয়া হয়েছিল। ছাত্রলীগ যথাসময়ে এসেছে, তাদের সাথে কথা হলো। তারা প্রায় ৩০টি দাবি, কিছু সুপারিশ সংবলিত স্মারকলিপি দিল। এরপর তাদের বললাম আমাদের আরেকটা ছাত্র সংগঠন আসবে, তাদের সুযোগ করে দাও। এরপর আমি ছাত্রদলের জন্য অপেক্ষা করছিরাম। পরে প্রক্টর সাহেব এসে বললেন তারা গেট পর্যন্ত আসছিল, ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আমি তথ্যগুলো ভালোভাবে এখনও জানি না। তারা কেন আসতে পারল না সেটা জানতে হবে। কী ঘটল, কোনো সমস্যা হলো কি না, কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটল কি না সেটা দেখতে হবে। আমি প্রক্টর সাহেবের কাছে বিষয়টা জানাব, বিস্তারিত তথ্যগুলো নিতে বলব। ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছাত্র সংগঠন তাদের ছাত্র রাজনীতি পরিচালনা করার অধিকার আছে। 

ছাত্রলীগের দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় ছাত্রদল।  এর মধ্যে গত অক্টোবরে ১৮ মাস পর রাজনীতির আঁতুরঘর খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে পা রাখে ছাত্রদল। মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে সেদিন ক্যাম্পাসে মিছিলও করে ছাত্রদল। তবে সেদিনও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সরব অবস্থান ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফেরা ঘিরে। 

এরই মধ্যে ১১ সেপ্টেম্বর খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও আরিফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই নতুন কমিটিই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে আসছিল।  

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেন এমন খবরে গতকালও ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে গতকাল শেষ পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে যাননি।  

আরও পড়ুন : মানুষের অভ্যুত্থান গুলি চালিয়ে বন্ধ করা যাবে না

ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকবে এমন খবরে আগে থেকেই অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ

এরপর আজ তাদের আসার খবরে ঢাবি ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিকেলে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় তাদের অন্তত ১০ জন আহত হন।  

আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ইসলামিক হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমাদের অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছে, ৪-৫ জন গুরুতর আহত। গুরুতর আহতদের মধ্যে আছেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম।   

এইচআর/এনএফ