নাম ধরে ডাকলেই কুকুরগুলো চলে আসে গাজীউলের কাছে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে কোনো ক্ষুধার্ত কুকুর দেখলেই খাবার দেন। শুধু কুকুরদের খাবার খাওয়ান এমন নয়, অনেক অসুস্থ কুকুরকে চিকিৎসাসেবাও দিয়েছেন। কুকুরের সঙ্গে এমন সখ্যতার কারণে প্রিয় কয়েকটি কুকুরের নামও দিয়েছেন। নাম ধরে ডাকলেই কুকুরগুলো দ্রুত চলে আসে তার কাছে।
প্রায় ১৪ বছর ধরে পশুপাখির সেবা করে যাচ্ছেন তিনি। তার সকালের একটা সময় কাটে পশুপাখির সঙ্গে। খাওয়ানো থেকে শুরু করে অসুস্থ প্রাণিদের চিকিৎসাও করান তিনি। কেবল পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা ও মানবিকতার জায়গা থেকে নিজের বেতনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এই কাজে ব্যয় করেন। তিনি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র শিক্ষক সাংস্কৃতিক (টিএসসি) কেন্দ্রের উচ্চমান সহকারী গাজীউল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ২০০৮ সালে মানবিকতার জায়গা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পশুপাখির জন্য কাজ শুরু করেন গাজীউল। প্রথমে নিজ অর্থায়নে শুরু করলেও পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সহযোগিতার হাত বাড়ান।
বিজ্ঞাপন
গাজীউল প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে ওঠে টিএসসিতে এসে পশুপাখির জন্য খাবার রান্না করেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে ৯টি পয়েন্ট ভাগ করে এসব খাবার খাওয়ান পশুপাখিদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবন, রসায়ন বিভাগের পেছনে, লাইব্রেরি চত্বরের পাশে, প্রশাসন ভবনের সামনে, পরিবহন মার্কেটে, মতিহার হলের সামনে, মেডিকেল সেন্টারের পাশে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরের পাশে ও বিনোদপুর গেটের দিকে এসব রান্না করা খাবার বিলি করতে প্রতিদিন ছুটে যান তিনি। রান্না থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ানো পর্যন্ত তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায় গাজীউলের।
গাজীউলের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, পশুপাখির প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে থাকে চাল, গরুর মাংসের চর্বি আর ডাল দিয়ে তৈরি খিচুড়ি। প্রতিবেলা খাবারের জন্য খরচ পড়ে প্রায় ৭০০ টাকা। এতে প্রতি মাসে ২০-২২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এই খরচের অর্ধেক অংশই তার পকেট থেকে যায়। আর বাকি অর্ধেক শিক্ষকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পান তিনি।
জানতে চাইলে গাজীউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ ১৪ ধরে এ কাজ করে আসছি। পশুপাখির প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকেই এ কাজ করছি। তাদের সঙ্গে আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। আমার মোটরসাইকেল যেতে দেখলেই পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে তারা। মাঝে মাঝে আমাকে না পেয়ে আমার গাড়ির পাশে বসে থাকে।
‘প্রতিদিন ৬০-৭০টি প্রাণির খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। আমার এ কাজে অনেকেই সহযোগিতার হাতে বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক ড. আমীরুল ইসলাম কনক ও হাবিবুর রহমান স্যার অন্যতম।’
তিনি আরও বলেন, রাবি উপাচার্য পশুপাখিদের ভালোবেসে গত ৬ জুলাই আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। প্রয়োজন হলে আরও সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। অসহায় এ প্রাণিকূল রক্ষায় আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসি তাহলে পশুপাখিরাও নিরাপদে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারবে। পশুপাখিদের সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটা পরিবারের মতো। তার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পশুপাখিও রয়েছে। করোনাকালে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পশুপাখিদের জন্য একটা কঠিন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল। তখন থেকেই এদের জন্য কাজ করা। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যেমন দরকার তেমনি জীবজন্তুর প্রতি আমাদের খেয়াল রাখাও দরকার। এটি একটি মানবিক কাজ। এ কাজটি করে আমরা নিজেরাও আত্মতৃপ্তি লাভ করি।
রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাজীউল পশুপাখিদের পাশে দাঁড়িয়েছে যা মানবতার পরম দৃষ্টান্ত। ফাঁকা ক্যাম্পাসের পশুপাখিদের কথা চিন্তা করে আমি অনুদান দিয়েছি। আগে আমরা কুকুর দেখলে ঢিল মারতাম, সাপ দেখলে মারতে যেতাম, পাখি দেখলে শিকার করতাম কিন্তু এখন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। এখন আমরা চিন্তা করি এদেরকে সংরক্ষণ করা দরকার। পশুপাখি সংরক্ষণে মানবিক জায়গা থেকে সবারই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এসপি