ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংহতির ধারক-বাহক পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নতুন হলেও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে সুদীর্ঘ দেড়শ বছরেরও ইতিহাস। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক সময়ের পাঠশালাটি আজ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ঢাকায় পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্ম সমাজের শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম স্কুল। একটি পাঠশালা হিসেবে যাত্রা শুরু করে দেড় শতকের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর অগ্রযাত্রার ইতিহাস বড়ই রোমাঞ্চকর। আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় পতাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং সর্বশেষ বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। এর আগে উপাচার্যকে গার্ড অব অনার দেবে বিএনসিসি। এছাড়াও কর্মসূচির অংশ হিসেবে আরও থাকছে আনন্দ র‍্যালি, চারুকলা প্রদর্শনী, নাটক পরিবেশনা ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সেখানে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেজ, সহজিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন করবে।

জানা যায়, ১৮৫৮ সালে ব্রাহ্ম স্কুল যাত্রা শুরু করে। ১৮৭২ সালে স্কুলের ভার তুলে দেওয়া হয়েছিল বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর হাতে। কিশোরীলাল চৌধুরী তার বাবার নামে স্কুলের নামকরণ করেন জগন্নাথ স্কুল। এভাবেই ১৮৭২ সালে ব্রাহ্ম স্কুল থেকে জন্মলাভ করে জগন্নাথ স্কুল। ১৮৮৪ সালে এ স্কুলকে দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯০৮ সালে জগন্নাথ কলেজ প্রথম শ্রেণির কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে জগন্নাথ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কার্যক্রম বন্ধ করে এটিকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অবনমিত করা হয়।

পুরান ঢাকার নারীশিক্ষায় বাধা দূর করতে ১৯৪২ সালে জগন্নাথ কলেজে সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৪৮ সালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে আবার এই কলেজে শুরু হয় স্নাতক পর্যায়। ১৯৬৩ সালে পুনরায় সহশিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি করা হলেও পরের বছরে আবার এটি বেসরকারি মর্যাদায় ফিরে যায়। সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর সাড়ে সাত একর জায়গা নিয়ে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে সাড়ে সাত একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া কেরানীগঞ্জ জেলখানার বিপরীতে আরও ৭.৫ একর জমি কেনা রয়েছে। আর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। বর্তমান ছয়টি অনুষদে ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭৮ জন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক ১৪৪ জন, সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৫৬ জন। এছাড়া এমফিল ২৪৫ জন ও পিএইচডি করছেন ১৪১ জন শিক্ষার্থী।

উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিতে কাজ করছি। গবেষণা খাতে গতবারের চেয়ে বাজেট দ্বিগুণ করে দিয়েছি। লাইব্রেরি, আইসিটি, কম্পিউটার কেনার বাজেট বাড়ানো হয়েছে। আশা করি, গবেষণায় আগামীতে আরও বাজেট বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সচেষ্ট হব। আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। থাকার জন্য নেই আবাসনের ব্যবস্থা, খেতে পারে না পুষ্টিকর খাবার। তারপরও আমাদের শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষেত্রে রেখে চলছে সাক্ষরতার ছাপ। আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে যে অদম্য স্পৃহা তৈরি হয়েছে নানা কারণে সেটাই তাদের সফলতার মূলমন্ত্র।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নতুন ক্যাম্পাসের কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করব। আমাদের মাস্টারপ্ল্যান ও ভূমি অধিগ্রহণও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানে আমাদের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজও চলমান। আশা করি, খুব দ্রুত কার্যক্রম শেষ করতে পারব। নতুন ক্যাম্পাসে আমরা প্রথমেই আবাসিক হলগুলোকে স্থাপন করার চেষ্টা করব। যাতে করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়। ইতোমধ্যে আমরা এক হাজার দুইশ ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছি।

এসএসএইচ