মহাসড়ক অবরোধ করে রাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার দায় নিয়ে রামেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর অপসারণ, ফজলে হোসেন বাদশার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো
বিজ্ঞাপন
১. শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং আনসারদের দ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা।
২. রামেকের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর অসংলগ্ন আচরণ ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ থাকায় তাকে অপসারণ করতে হবে।
৩. রামেকের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে।
৪. রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডাক্তারদের দোষ ওয়ার্ডবয়দের ওপর, ওয়ার্ডবয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আর চলবে না।
৫. এমপি বাদশার বেশামাল, অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অভিযোগ জানাতে গেলে অভিভাবকদের ওপর আক্রমণের বদ অভ্যাস পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি মানবিক ও আন্তরিক হতে হবে।
৭. জরুরি বিভাগে সিনিয়র চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের দায়িত্ব চলাকালীন নার্স/ওয়ার্ডবয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়া চলবে না।
৮. আইসিইউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের স্বাক্ষরের নামে টালবাহানা করে যে কালক্ষেপণ করা হলো তা দ্বিতীয় কারও সঙ্গে করা হবে না, এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৯. অনতিবিলম্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে। রামেকের ডাক্তার-নার্সরা মনগড়া, বানোয়াট, কাল্পনিক, অসত্য যে ঘটনা সাজিয়েছে তার চিত্র প্রকাশ করে সবাইকে প্রকৃত সত্য জানার সুযোগ করে দিতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা চাই সে দিন রাতের সত্য ঘটনা বেড়িয়ে আসুক। সেই দিন আমাদের ছাত্রদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের পাশে আছে।
মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ও ব্যবসা অনুষদের অভিকর্তা অধ্যাপক ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরাও বিভাগের পক্ষ থেকে ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাগ্রতা প্রকাশ করছি। আমার ছাত্র শাহরিয়ারের চিকিৎসায় সময়ক্ষেপণ, ছাত্রদের ওপর হামলা, মিথ্যা মামলা দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে আছি। তাদের দাবি এখন আমাদেরও দাবি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদের সঙ্গে থাকব।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অবহেলার কারণে আমরা আর কোনো শহরিয়ারকে হারাতে চাই না। আর কোনো ভাইকে অকালে চলে যেতে দিতে পারি না। কোনো বাবার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দিতে পারি না।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, সেটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একের পর এক নাটক সাজান। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করেন, আপনাদের বিবেক লজ্জা পেয়ে যাবে।’
মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল বের হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে কাজলা গেট হয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে এমজিএম শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থীকে গুরুতর আহত অবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রামেকে নেওয়ার ৩৫ মিনিট পর বিনা চিকিৎসায় আহত শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের সামনে ও পরিচালক কক্ষের সামনে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক, হাসপাতালের স্টাফরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। হামলায় ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে গেছে ও আরেকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অন্যদিকে ইটার্ন চিকিৎসকদের দাবি, রাবি শিক্ষার্থীরা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছেন।
এসপি