ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের জন্য বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন শাসকদের অন্যায় ও অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিপক্ষে পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যার ফলে নানা চড়াই উতরাই আর বাঁধা বিপত্তির পর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন প্রদীপ জ্বালাতে ঢাকা কলেজের যে মহিমাময় ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে তা বিরল। বস্তুত ঢাকা কলেজের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, বিভিন্ন ভবন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার ও বই-পুস্তক ইত্যাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া হয়। এর ফলেই ১৯২১ সালের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

কলেজের বিপুল পরিমাণ জমি ও ক্যাম্পাস ও হোস্টেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং মেধাবী ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ করা বিভিন্ন বৃত্তিও হস্তান্তর করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা কলেজের এই সহযোগিতা কৃতজ্ঞতা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলের নামকরণ করা হয় ঢাকা হল। বর্তমানে যা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হল নামে পরিচিত।

তাছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কার্জন হল ছিল ঢাকা কলেজের পাঠাগার। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন বর্তমান কার্জন হলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শরীফউদ্দীন আহমদ লিখিত প্রবন্ধে জানা যায়, এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। 

এছাড়াও ১৯০৪ সালে ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল—‘ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে। এই কলেজের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করিবার নিমিত্তে কার্জন হল নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করিয়াছেন।’

অন্যদিকে সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তরের পর ঢাকা কলেজের নতুন ক্যাম্পাস নির্দিষ্ট হয় পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে। আজকের প্রজন্মের অনেকেই জানতে চান, কার্জন হলের পূর্ব পাশের সড়কটি কেন কলেজ রোড নামে পরিচিত। এর কারণ হলো—এই সড়কটির নামকরণ করা হয়েছিল তখন, যখন কার্জন হল ছিল ঢাকা কলেজের।

১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য হাইকোর্টের কলেজ ভবনটি ছেড়ে দিতে হয়। তখন কলেজটি লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমান সরকারি কবি নজরুল কলেজ) স্থানান্তর হয়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীবাজার থেকে সিদ্দিক বাজারে অবস্থিত মরহুম খান বাহাদুর আব্দুল হাইয়ের একটি ব্যক্তিগত ভবনে কলেজের দাপ্তরিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলেজের হোস্টেল তৈরি করা হয়।
১৯৫৫ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে নতুন অবকাঠামোয় নতুনরূপে শুরু হয় ঢাকা কলেজের অভিযাত্রা।

আরএইচটি/কেএ