অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজে উদ্যোক্তা উৎসব
রাজধানীর আজিমপুরের গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজে শুরু হয়েছে উদ্যোক্তা উৎসব। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিনব্যাপী এই উৎসবের পর্দা ওঠে।
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজ এন্টারপ্রেনর’স ক্লাবের তত্ত্বাবধানে এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেনরশিপ বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এবং পাঠ্যসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সকালে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত রুমিনা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোনিয়া বেগম, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেনরশিপ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সামসাদ খোরশেদ।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উদ্যোক্তা উৎসবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ষোলোটি স্টল বসেছে। প্রাধান্য পেয়েছে গ্রামীণ ইতিহাস-ঐতিহ্য আর আবহ। অঙ্গশোভা, পণ্যবিচিত্রা, সৌখিন, কুঁড়েঘর, তুলির ছোঁয়া, শতরূপা, ত্রিফলা, রঞ্জিনী, নকশা, বিরিয়ানি হাউজ, হইচই ফুড জোন, আটফোড়ন, পিঠাপুলির সমাহার, আচারীঘর ও ভলান্টিয়ার স্টলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রায় হারিয়ে যেতে বসা মৃৎশিল্পের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে মাটির তৈরি বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে স্টল সাজিয়েছে রঞ্জিনী। মাটির সেসব তৈজসপত্রে সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে শিক্ষার্থীরাই করেছেন হ্যান্ড পেইন্ট। রয়েছে কিছু ক্যালিগ্রাফিও।
স্টলের গ্রুপ লিডার সাবরিনা আফরিন বলেন, বাংলার মাটি বাঙালির পরিচয়ের ধারক ও বাহক। বর্তমান সময়ে নানা কারণে মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাওয়া সেই মৃৎশিল্পকে ভিন্নভাবে, ভিন্ন রঙে সাজিয়ে নতুনভাবে
উপস্থাপন এবং মাটির জিনিসপত্র বাঙালি সংস্কৃতিতে প্রবহমান রেখে উদ্যোক্তা হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, বাংলার ঐতিহ্যের একটি বড় পরিচায়ক এই মৃৎশিল্পকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা ও এটিকে কেন্দ্র করে একজন কুমোর বা উদ্যোক্তা হয়ে গ্রামীণ মৃৎশিল্পীদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
শাড়ি ও কাঠের দেশীয় পণ্য বিশ্ব বাজারে তুলে ধরা এবং নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসাক্ষেত্রে সফল হওয়ার কথা জানালেন কুঁড়েঘর স্টলের গ্রুপ লিডার এশা ইসলাম পায়েল। বলেন, আমাদের স্টলে শাড়ি ও কাঠের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা শাড়ির বাজারে নতুন ডিজাইন দেশীয় ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে বিশ্বকে চমকে দিতে চাই। সেজন্য দেশীয় কাঁচামালে পণ্য তৈরি করা, পণ্যের মূল্য ক্রেতার হাতের নাগালে রাখা এবং পণ্যের মান ও গুণ ঠিক রাখার দিকে খেয়াল রেখেছি।
এছাড়াও হ্যান্ড পেইন্টেড ব্যাগ, বুকমার্ক আর সানগ্লাস আর গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে ব্যাপকভাবে মিশে থাকা বিভিন্ন খাবার ও আচারের স্টলের উদ্যোক্তারাও আগামীর সম্ভাবনাময় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চান। শহুরে যান্ত্রিক জীবনে গ্রামীণ অনুভূতি নিয়ে আসা এবং শৈশব স্মৃতিকে জাগ্রত করে পণ্য সবার কাছে পৌঁছে দিয়ে মুনাফা অর্জন করে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা জানালেন তারা।
দেশের অর্থনীতিতে নারীর বিপুল অবদান আরও বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তা উৎসব ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে এমন আশার কথা জানিয়েছেন কলেজের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেনরশিপ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য এ আয়োজন বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। মূলত ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। একজন ব্যবসায়ী তিনি শুধু ক্রয়-বিক্রয় এবং লাভের ওপর নির্ভরশীল। অপরদিকে, একজন উদ্যোক্তাকে ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার ও ঝুঁকির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা একজন উদ্যোক্তার আগ্রহ থাকতে হয়। বিষয়গুলো আমরা শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে থাকি। সেসব পুঁথিগত বিদ্যার ব্যবহারিক অংশ হিসেবে এমন আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করে সত্যিকারের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের গড়তে পারবেন।
এন্টারপ্রেনরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সামসাদ খোরশেদ বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক যে শিক্ষা গ্রহণ করছে তার প্রয়োগের জন্যই এই আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের উন্নত অর্থনীতি গড়ে তুলতে পিছিয়ে পড়া নারী গোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
আরএইচটি/এমএ