চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক নারী সাংবাদিককে ছাত্রলীগের হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর এলাকায় এ মানবন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে, ‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে আঘাত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘অপরাধীদের চেনা যায় শাস্তি তবু দেওয়া দায়’, ‘ছবি তোলা-ভিডিও করা যাবে না, তাহলে সাংবাদিকের কাজ কী?’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। 
 
ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকের সহপাঠী ও বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা হুমকিদাতাদের বিচারের আওতায় নিয়ে না আসা পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী মারজান আক্তারকে তার পেশাগত দায়িত্বপালনকালে ‘তোর নিরাপত্তা কে দেয় দেখব’ বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। হুমকিদাতারা এখনও ক্যাম্পাসেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে তাকে হুমকিদাতারা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে।  এমতাবস্থায় তাকে নিরাপত্তাহীনতায় রেখে আমরা ক্লাস করতে পারি না। তাই আমরা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। এ সময় তারা ৩ দিনের মধ্যে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে গণমাধ্যম কর্মীরা। শিক্ষার্থীদের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সঙ্গী সাংবাদিকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনার গল্পের পাশাপাশি সব অনিয়ম ও দুর্নীতির খবরও উঠে আসে সাংবাদিকদের কলমে। পেশাগত দায়িত্বপালনকালে সাংবাদিকদের বাধা প্রদান করা মানে ক্যাম্পাসের ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর টুটি চেপে ধরা। আমরা আজকের এই আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছি এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাংবাদিক স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং নানা সমস্যা ও অনিয়মগুলো তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের একজন নারী সাংবাদিক যদি তার কাজ করতে গিয়ে এ ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়, এটা লজ্জাজনক আমাদের জন্য। এজন্য আমি প্রশাসনের নিকট দাবি জানাব, এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি রওশন আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক ফারজানা করিম, সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল হক, সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক খন্দকার আর রাজি এবং সহকারী অধ্যাপক রাজীব নন্দী।

উল্লেখ্য, ৯ ফেব্রুয়ারি চারুকলা শিক্ষার্থীদের চলমান সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে থাকা দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারজান আকতারকে হেনস্তা করেন ভিক্স গ্রুপের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ। এই প্রতিনিধির ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ ছবি এবং ফুটেজ ডিলিট করতে চাপ সৃষ্টি করেন তারা। ঘটনার দুদিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘোষণা করেন রুটিন দায়িত্বে থাকা রেজিস্ট্রার মাহবুব হারুন চৌধুরী। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন- অধ্যাপক শিপক কৃঞ্চ দেবনাথ এবং সহকারী প্রক্টর ড. আহসানুল কবীর। 

রুমান/এনএফ