আন্তর্জাতিক বাংলাভাষা দিবসকে সম্মান জানাতে কলকাতা থেকে হেঁটে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মৃণাল দাশ (৫৫)।

তিনি গত ৭ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের লেক গার্ডেন থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। ১০ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এরপর আজ দুপুর ৩টার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পৌঁছান।

মৃণাল দাসের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার চুঁচুড়া এলাকায়। তিনি পেশায় গৃহশিক্ষক। এর আগে ২০১৯ সালে আরেকবার দলবেঁধে সাইকেল চালিয়ে এসেছিলেন বলে জানান তিনি।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মৃণাল দাসের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ভাষা নিয়ে যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, ভাষা নিয়ে যে উন্মাদনা তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করা অনেক গর্বের। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। যাদের কারণে আন্তর্জাতিক ভাষার সম্মাননা পেয়েছে বাংলা ভাষা। তাই এই একুশে মাতৃভাষা দিবস ও ভাষা শহীদদের সম্মান জানাতে আমি এসেছি। এছাড়া বাংলাদেশের অমর একুশে বইমেলা আমার দেখার ইচ্ছে আছে।

তিনি বলেন, আমি গত ৭ মার্চ লেক গার্ডেন থেকে রওনা দিয়েছিলাম আজ একটু আগে শহীদ মিনারে এসে পৌঁছেছি। একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই পোঁছাতে পেরে ভালো লাগছে। আমি পুরোটা সময় একা হেঁটে এসেছি। শুধুমাত্র পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে বাধ্য হয়ে বাসে আসতে হয়েছে। চলার পথে বিভিন্ন জায়গায় বিশ্রাম নিয়েছি, স্কুল-মাদ্রাসা যখন যেখানে পেরেছি রাত্রিযাপন করেছি।

দীর্ঘ এ পথ হেঁটে কেন পাড়ি দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ভালোভাবে জানতে, এ দেশের মানুষের সঙ্গে মিশতে হেঁটে আসার সিদ্ধান্ত নিই। বলা যায়, ঝাপটে ধরে আড্ডা দিতে দিতে আমি এখানে এসেছি। এখানকার মানুষের আপ্যায়ন, ভালোবাসা, আন্তরিকতা সবই আমি পেয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে বুঝতে দেয়নি যে একটা রাষ্ট্র সীমা পেরিয়ে আরেকটা রাষ্ট্র সীমায় এসেছি।

পিঠের ব্যাগে সযত্নে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ও ভারতের পতাকা পরম শ্রদ্ধাভরে বহন করছেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কোনো পার্থক্য দেখছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। বাঙালি মানে এক স্বত্বা, এক জাতি। কেবলই সীমান্ত আমাদের পৃথক করে রেখেছে। বাংলাদেশের মানুষের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। আমি যে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি এটাও তো বাংলাদেশের জন্য, যারা এ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- এটার কৃতিত্বও বাংলাদেশের মানুষের। বাঙালি হিসেবে এই দিনটাতে এখানে থাকতে পারাটা আমার জন্য গর্বের। অন্তত এ দিনটায় ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত।

এইচআর/এসকেডি