জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গ্র্যাজুয়েটদের উপস্থিতিতে পুরো ক্যাম্পাস প্রাক্তন-বর্তমানদের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। আগামীকাল শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিতব্য এই সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ১৫ হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী।

প্রতিষ্ঠার পর এবারের সমাবর্তনে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন ও উইকেন্ড প্রোগ্রামের তিন হাজার ৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন রয়েছেন।

শনিবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হবে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বক্তা হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সবগুলো বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরধারী ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।

এদিকে সমাবর্তনকে ঘিরে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। গত কয়েকদিন ধরেই কালো রঙের গাউন-টুপি-কস্টিউম পরে ক্যাম্পাস ও হলের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তোলা, সহপাঠীদের নিয়ে দলবেঁধে গল্প করা এবং ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া দর্শন বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুবা বিনতে মোহাম্মদ মহুয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে অনেক বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে এবং আমরা সবাই অনেক আনন্দিত। বিশেষ করে আমরা যারা সর্বকনিষ্ট ব্যাচ হিসেবে এই সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছি আমরা বেশিই আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো যেন প্রতিবছর এমন উৎসবে সমাবর্তনের আয়োজন করে। এতে করে যেসব শিক্ষার্থী সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করবে তাদের আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে। 

এবারের সমাবর্তনে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার মিতু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামীকালের সমাবর্তনে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে আমি অংশ নিতে যাচ্ছি। আমি আমার পরিবারকে নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছি এই সমাবর্তন উপভোগ করার জন্য। আগামীকাল মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আমি গোল্ড মেডেল গ্রহণ করব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ এ ধরনের সুযোগ আমাকে দেওয়ার জন্য। আমি বিশ্বাস করি এ স্বীকৃতি আমার কর্মজীবনে আমাকে উৎসাহিত করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাত বছর পর সমাবর্তন হচ্ছে। যারা এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করছেন, আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই, স্বাগত জানাই। দীর্ঘদিন পরের সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী অবশ্যই অনেক বেশি থাকে। সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা আয়োজন কোনো কমতি রাখিনি। ১৫ হাজার শিক্ষার্থী সমাবর্তনে অংশ নেবে। আমরা বসার ব্যবস্থা করেছি ১৮ হাজার জনের। যারা সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন আমি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমাবর্তন আয়োজনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে গাউন ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। নিবন্ধিত ফরম এবং সাময়িক সনদপত্র জমা দিয়ে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গাউন ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস জানায়, সমাবর্তনে মোট ১২ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থায়ন করবে এক কোটি টাকা। আর বাকি টাকার যোগান দেওয়া হবে সমাবর্তনের রেজিস্ট্রেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ খাত থেকে।
 
আলকামা/আরএআর