ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন তথ্য-প্রযুক্তি ও জ্ঞান নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত তৈরি করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন যুগান্তকারী পরিকল্পনা ও কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটিয়ে শিশু শিক্ষার্থী ও নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১৭ মার্চ) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর স্মৃতির গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। জাতির পিতার জন্মদিনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানমনস্ক, দেশপ্রেমী ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য উপাচার্য শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ জাতির পিতার সাহসী ও সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধু উদার, সাম্যবাদী চেতনা ধারণ করতেন। নির্যাতন, নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়াই ছিল তার জীবনের উদ্দেশ্য।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের একক নেতা। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির মুক্তি নয় বরং সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে ভাবতেন।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ সকালে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এছাড়া, চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে সকালে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। পরে তিনি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন।

এ সময় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মোট ৩টি গ্রুপে এই প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, নীলক্ষেত উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার শিশুরা অংশগ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, রাত ১২টা ১ মিনিটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কেক কাটার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস- ২০২৩ উদযাপনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই কেক কাটেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন'।

দিবসটি উপলক্ষ্যে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়া'য় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় এবং আবাসিক হল ও হোস্টেলের মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া, প্রার্থনা এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, সন্ধ্যা ৬:৩০টায় সংগীত বিভাগ এবং নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।

এইচআর/এসকেডি