রমজান এলেই দাম বাড়িয়ে দিতে হবে- দেশের এমন অনৈতিক রীতিই যেন মানছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলের ক্যান্টিন মালিকরা। মান না বাড়ালেও রমজান শুরু হতেই খাবার প্রতি ২০-৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা।

হঠাৎ খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের খাবারের আশায় সাহরির সময় এক হল থেকে অন্য হলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় তাদের। তাতেও হতাশ হয়ে ফিরেন অনেকেই। এ নিয়ে ক্ষোভ, হতাশা সৃষ্টি হয়েছে অনেকের মনে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রমজানে খাবারের দাম বাড়লেও বাড়েনি গুণগত মান। হলগুলোতে আইটেমের নামে কয়েকটি পদ একত্র করে রাখা হচ্ছে চড়া দাম। রমজানের আগে যে মাছের দাম ছিল ৪০ টাকা, এক দিনের ব্যবধানে সে মাছের দাম হয়েছে ৭০ টাকা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, সূর্যসেন হল, কবি জসীমউদ্দিন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ প্রায় সব হলে খাবারের দাম আগের থেকে প্রায় ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কয়েকটি হল ঘুরে দেখা যায়, গরু ও খাসির মাংস ভাত ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা, গরুর মাংস ও ভাত ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, মুরগির মাংসের ভুনা ও ভাত ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, মাছ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকা, সবজি ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা। একটু ভালো মানের খাবারের আশায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ও হলের খাবারের দোকানগুলোতে খায়। সেখানেও খাবারের দাম বেড়েছে আগের তুলনায়।

প্রথম সেহরির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাবির হল ক্যান্টিনগুলোর খাবার নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ থাকলেও রমজান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল ভিন্ন। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। রমজান উপলক্ষে খাবারের মান না বাড়লেও দামের দিক দিয়ে ভালোই উন্নতি হয়েছে। কয়েকটি হল ছাড়া সব হলেই খাবারের মূল্য বেড়েছে।

সুর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রহমান মাসুম বলেন, খাবারের দাম এতই নিম্নমানের যে আমাদের কয়েকজন বন্ধু না খেয়ে উঠে গেছে কিন্তু দাম ২০-৪০ টাকা বেশি। পরে ২-৩টা হল দেখে আমরা কয়েকজন কোনরকম খেয়ে এসেছি। এভাবে রমজান কাটানো খুবই কঠিন। ক্লাস না থাকলে কালই বাড়িতে চলে যেতাম।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার তালুকদার তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে খাবারের দাম রমজানে এতোটাই বেড়েছে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর পক্ষে একটা টিউশনি করে চলা অসম্ভব। যাদের কোনো আয়ই নাই, তাদের কথা আর কি বলব! বেঁচে থাকাটাই একমাত্র সংবাদ।

মো. নাসিম নামে আরেক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, রমজানের চাঁদ উঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্টিনের খাবার দাম ২০-৩০ টাকা করে বৃদ্ধি। বৃহস্পতিবার রাতে যে খাবারের দাম ৪০-৫০ টাকা টাকা ছিল, রাতের ব্যবধানে ৭০ টাকা, পরিমাণ কিন্তু একই।

এদিকে দাম বাড়ার পেছনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন বিভিন্ন হলের ক্যান্টিন মালিকরা। তারা বলছেন, রমজানের আগে আগে সব কিছুর দাম বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা যে দামে খেতে চাচ্ছেন সে দামে আমরা কিনতেও পারছি না। এছাড়া রমজানে মাছ মাংসের সাইজও বড় করা হয়। নিরুপায় হয়ে দাম কিছুটা বাড়িয়েছেন বলে জানান তারা।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক ডালিম মিয়া বলেন, দামের বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা নিরুপায়। দাম কিছুটা না বাড়ালে আমরা চালাতে পারব না। মাছ-মাংসের পিসের সাইজও বৃদ্ধি করেছি।

সুর্যসেন হলের ক্যান্টিন মালিক মো. ফাহিম হোসেনের দাবি, খাবারের মান ভালো ছিল। তবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া অন্য সময়ের তুলনায় খাবারের কোয়ালিটি ও সাইজ অনেক ভালো ছিল। তাই তুলনামূলক দামও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে হলের ক্যান্টিন ও দোকান পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মকবুল হোসেন ভুঁইয়া। এ সময় রমজানে হলে খাবারের মূল্য বৃদ্ধি না করে দামের সঙ্গে মানের সামঞ্জস্য রাখার পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থা করার নির্দেশনাও দেন তিনি। রমজানকে কেন্দ্র দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

কবি জসীমউদ্দিন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ বলেন, বাজারে জিনিসপত্র দাম বাড়ায় সবকিছুতে প্রভাব পড়েছে। তারপরেও মনিটরিং করছি যেন শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা যায়। অন্যান্য হলের ক্যান্টিনের দামের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে খাবার দাম নির্ধারণ করা হবে।

এইচআর/ওএফ