ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক সহকারী অধ্যাপকের ভাই।

সদ্য প্রকাশিত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহজাহান কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়। গুচ্ছের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩০ থাকলেও এর কম পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপকের ভাইকে পোষ্য কোটায় ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী পোষ্য কোটায় শুধু ঔরসজাত সন্তান এবং স্বামী বা স্ত্রী সুযোগ পেলেও বশেমুরবিপ্রবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১১ জন ভাইবোনকে পোষ্য কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খাদিজা আক্তারের ভাই মো. ওমর ফারুক নাদিম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবা উদ্দিনের বোন মাসলিনা উদ্দিন নাসিতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দ্বীন মোহাম্মদের বোন আফিফা খাতুন বৃষ্টি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সানোয়ার হুদার বোন নাহারিন জান্নাত, অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের বোন জান্নাতুল আদনীন, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল আমিনের বোন আইরিন আক্তার আঁখি, বাসের হেলপার রহমান মুন্সির বোন ফাতেমা আক্তার মৌ, বায়োজেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব টেকনিশিয়ান সোহেল রানার ভাই মো. লিটন মোল্লা,  ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মনিরুজ্জামানের বোন শারাবন তাহুরা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবাইদুর রহমানের ভাই মো. জাকারিয়া হোসেন ও ওইটিই বিভাগের ল্যাব টেকনিশিয়ান রফিকুল ইসলাম অপুর ভাই ইবাদ আলী।

এই প্রক্রিয়ায় তাদের মোট ১৩ জন ভর্তির আবেদন করেন। যাদের মধ্যে তিনজনের জিএসটি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩০ এর কম। পরবর্তীতে দুজনকে বাদ দেওয়া হয় এবং একজন শিক্ষার্থীকে ইতিহাস বিভাগে ভর্তির জন্য নির্বাচিত করা হয়। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবাইদুর রহমানের ভাই।

ভর্তি সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের সময় পোষ্য কোটায় ভাইবোন অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠলে পোষ্য কোটায় ভাইবোন ভর্তি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আবারো এটি চালু করা হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গত ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে পোষ্য কোটায় ভাইবোনদের সুযোগ না দেওয়ার বিষয়ে এবং শুধু ঔরসজাত সন্তানদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ দলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল কমিটির সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তেই তাকে ভর্তি করা হয়েছে। তার নম্বর ছিল ২৯.৫। তাই তাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, পোষ্য কোটায় ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমরা রিজেন্ট বোর্ডে উত্থাপন করবো। তারা পাস না করলে এটা বাতিল হবে।

আশিক জামান/এমজেইউ