পছন্দের প্রার্থীকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ না দেওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ রেখে মারধর করা হয়েছে। খুলনার কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের নেতৃত্বে ওই অধ্যাপককে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। 

রোববার (৭মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে দুপুরে এ মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নীতি-নৈতিকতার ওপর অটুট থাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এই বর্বরোচিত হামলা করেছে। এ হামলা কি তাহলে এটাই প্রমাণ করে এ সমাজে যে নীতির নৈতিকতা নিয়ে চলবে তার ওপরই এ ধরনের হামলা হবে। তিন ঘণ্টা যাবত একজন সামান্য ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের ওপর নির্যাতন চালাল; এতেই বুঝা যায় আমাদের সমাজ কতটা অধঃপতনে চলে গেছে। অন্যদিকে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এত নির্যাতনের মুখেও নীতিতে অটুট ছিলেন, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। সেটাও শিক্ষক সমাজের জন্যও গৌরবের বিষয়।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ বলেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে বিগত সময়ে দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ওপর এ ধরনের হামলা হয়েছে বলে জানা নেই। বিভাগের সহকর্মীর ওপর এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুর হোসেন বলেন, একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক একজন শিক্ষকের ওপর হামলা পুরো শিক্ষক সমাজের ওপরই হামলার নামান্তর। এ ধরনের বর্বরোচিত হামলা আমাদের শিক্ষক সমাজের নিরাপত্তার ওপর হুমকি স্বরূপ। 

মানববন্ধনে কলা অনুষদের ডিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদদীন বলেন, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সঙ্গে থাকা মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। একই ঘটনায় আমাদের সহকর্মীর ওপর হামলা হলো কিন্তু ওই বোর্ড পরিচালক একদম অরক্ষিত অবস্থায় সেখান থেকে ফিরে এসেছেন। এখানেই সন্দেহ হয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে ওই কর্মকর্তার কোনো দেনাপাওনার যোগসাজশ আছে কিনা?

মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. লুতফর রহমান হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কোনো শিক্ষককে নির্যাতন করলে আমরা বসে থাকতে পারি না। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে। এ সময় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, খুলনার কয়রার উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ৫ মার্চ ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামকে সেখানে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই নিয়োগ পরীক্ষার কেউ লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়ায় চেয়ারম্যানের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটকে রেখে মারধর করেন মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ।

এমএল/ওএফ