ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারণে নয়, বরং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছেন বলে বিভাগের পক্ষে থেকে দাবি করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ মে) বিভাগের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলীলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।

রোববার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দিনের সভাপতিত্বে একাডেমিক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির একাধিক সদস্য এসব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বলে ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার (১৪ মে) অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় বিভাগের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারী সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনলাইন পোর্টালে বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের নানা বিষয়ে লাগাতার কুৎসা, বিষোদগার, অপপ্রচার ও মানহানিকর অপপ্রয়াসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, সভায় শিক্ষকেরা এ বিষয়ে তাদের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারণে নয়, বরং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। অথচ তিনি ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্যের অপপ্রচার করে যাচ্ছেন; এতে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন ও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন শিক্ষাছুটিতে থাকা এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গবেষণা ও প্রকাশনা না থাকায় তার পদোন্নতি বিলম্বিত হয়; এখানে বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দায় বা প্রতিবন্ধকতা ছিল না। একপর্যায়ে পারিবারিক প্রয়োজনে বিরাট অঙ্কের অর্থের সংস্থানের জন্য তিনি অন্য উপায় হয়ে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে বাধ্য হন; অথচ এরপর থেকেই ক্রমাগত তিনি বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন।

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বাহাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে বিভাগের জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা ডাকা হয়। সভায় ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ’র এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, উপাচার্যকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণের মাধ্যমে অনুরোধ করা; বিভাগের সঙ্গে তার সমস্ত যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নানা বিষয়ে তার পূর্বাপর প্রকৃত অবস্থা জনসমক্ষে তুলে ধরা।

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও একাডেমিক কমিটির সদস্য মো. আহসানুল হাদি ঢাকা পোস্টকে বলেন, একাডেমিক কমিটিতে কয়েকজন শিক্ষক এসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিভাগের সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কি না জানতে চাইলে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দ্বিমতও ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, যেসব বিষয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে সব বিষয়ে আলোচনাই হয়নি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই, ওনার বিরুদ্ধে একাডেমিক কমিটির মিটিংয়েরও প্রয়োজন ছিল না।

ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান, অধ্যাপক আব্দুস সবুর খান এবং বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এবং অনিয়ম গণমাধ্যমে আসায় তাদের অপরাধ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এসব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগের অবতারণা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ আমি তো ভুক্তভোগী-নির্যাতিত হিসেবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করে আসছি।

তিনি বলেন, বারবার উপাচার্যের অফিসে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির গুরুতর অভিযোগ করে আবেদন করার পরেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া এবং আমার কনফারমেশনের ফাইল বছরের পর বছর আটকে রাখায় আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি এবং বিশেষ করে চৌর্যবৃত্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব বিষয় আমার ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা পদোন্নতি কনফারমেশন এগুলো সংশ্লিষ্ট সব কিছুই আমার ব্যক্তিগত বিষয়। আর এসব ক্ষেত্রে সুবিচার পাইনি বলেই অবসর নিয়েছি।

‘আমার প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রবন্ধ ছিল না বিধায় আমি অধ্যাপক পদে আবেদন করতে পারিনি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি বিলেতে পিএইচডি করেছি। ইরান, ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বাংলাদেশে যত গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তা দিয়ে কেবল অধ্যাপক নয়, ইমেরিটাস অধ্যাপক হওয়া যায়। কাজেই তাদের বক্তব্য মিথ্যা।’

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের কারণ জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন ড. আবু মূসা মো. আরিফ বিল্লাহ। সেখানে তিনি বিভাগের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কনফারমেশন ফাইল বিনা কারণে আটকে রাখায় স্বেচ্ছায় অবসর করেছেন বলে উল্লেখ করেন। পরে সেটি নিয়ে মতামতসহ ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এইচআর/এসএসএইচ/