অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসুসহ কয়েকজন শিক্ষকের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপানোর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মো. মেহেদী হাসান পবিপ্রবির ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক।

পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, শিক্ষক মেহেদী হাসান বিভিন্ন সময়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলার জন্য আমাদের গলায় ফাঁসির রশি সম্বলিত ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছেন। যা প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক (নন টেকনিক্যাল) পদে চাকরি পান মেহেদী হাসান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এতে প্রার্থী হিসেবে তার যোগ্যতা ছিল না। এরপরও তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। আর নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকদের তিনি ব্ল্যাকমেইল করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন শিক্ষকের ছবি ব্যবহার করে তিনি তাদের ফাঁসির দাবি তুলে পোস্টার ছাপিয়েছেন।

ছাপানো পোস্টারে দাবি করা হয় ২০১৮ সালের ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশিষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিদের ফাঁসির দাবি করে তিনজন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপানো হয়। পোস্টারে হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের চাপে ফেলতেই গোপনে এমন একটি পোস্টার ছাপিয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানোর পরিকল্পনা করছিলেন অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিতকে আগে থেকেই বলেছিলেন তার (মেহেদী হাসান) কিছু পোস্টার আসবে সেগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিত বলেন, সেদিন রাতে মেহেদী স্যার আমাকে বলেছিলেন গাড়িতে একটি প্যাকেট আসবে, আমি যেন উপজেলার গেট থেকে প্যাকেটটি নামিয়ে নিই। আমি ব্যস্ত থাকায় আমার এক নিরাপত্তাকর্মীকে দিয়ে প্যাকেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে রাখি। সকালে প্যাকেটটি খোলার পর এসব পোস্টার দেখে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রার স্যারকে জানাই এবং পুরো বিষয়টি বলি।

দেবাশিষের আত্মহত্যার বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ২০১৮ সালে যখন দেবাশিষ আত্মহত্যা করে সেসময় আমি কোনো দায়িত্বে ছিলাম না এবং দেশের বাহিরে অবস্থান করছিলাম। কী কারণে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপানো হয়েছে তা হয়ত সে (মেহেদী হাসান) বলতে পারবে। এছাড়া মেহেদী হাসান যে পোস্টারগুলো ছাপিয়েছেন তা নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভারকে নির্দেশনা দেন এবং পোস্টার নামানো ও লাগানোর জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। এ কারণে গত ২৮ মে ভিসি স্যারের নির্দেশে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২(১) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা ৯(১) মোতাবেক চাকরি হতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

যোগ্যতা না থাকলেও মেহেদী হাসানের নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, তাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, দেবাশিষ আত্মহত্যা করায় আমি সব সময় এর মদদদাতাদের বিচার চেয়ে আসছি। তবে আমি পোস্টার ছাপানোর সঙ্গে জড়িত নই। এটা তারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সাময়িক বরখাস্তের যে চিঠি দিয়েছে তাতে পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। মূলত আমি তাদের দলে না থাকায় তারা আমাকে হয়রানি করছে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন এমন প্রশ্নে মেহেদী হাসান বলেন, আমার যোগ্যতা ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে যোগ্য মনে করেছে বিধায় নিয়োগ দিয়েছে।

পবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, দেবাশিষের আত্মহত্যার বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। আমি সেসময় (২০১৮ সালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে রেজিস্ট্রার কোনোভাবেই জড়িত থাকে না।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এমজেইউ