রাবিতে সাজ্জাদের লেবুর পিনিক-ভাঙচুরে মজেছেন শিক্ষার্থীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অথচ লেবুর পিনিক খায়নি এমন শিক্ষার্থী কমই আছে। টক আর ঝালের সংমিশ্রণে তৈরি এই অভিনব খাবার খেতে প্রায়সই ভিড় জমান শিক্ষার্থীরা। কখনো ক্লাস শেষে কখনো বা ক্লাস চলাকালে। এই লোভনীয় পিনিকের পরিচিতি শুধু রাজশাহীতেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে রাজশাহীর বাইরেও খাবারটি পরিচিতি পেয়েছে। বহিরাগতরাও এখন আসেন শুধু লেবুর পিনিক খেতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কলাভবনে সামনে এই লোভনীয় লেবুর পিনিক বিক্রি করেন সাজ্জাদ হোসেন। যাকে সবাই চেনেন সাজ্জাদ ভাই নামে। সাজ্জাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীর কাজলা এলাকায়। তার ছেলে সন্তানসহ পরিবারের রয়েছে পাঁচজন সদস্য।
বিজ্ঞাপন
সপ্তাহে শুক্র-শনিবার বাদে প্রায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে লেবুর পিনিক, লেবু চুর, ঝালমুড়িসহ বেশ কিছু আইটেম বিক্রি করেন সাজ্জাদ। অধিকাংশ সময় তাকে ব্যস্ত থাকতেই দেখা যায়।
লেবুর পিনিক তৈরি করতে প্রথমে একটা পরিষ্কার লেবুকে গোল গোল করে পিস পিস করে কাটা হয়। এক এক করে পাঁচটি পিস সাজানো হয়। সাজনো লেবুগুলোর উপরে দেওয়া হয় বিটলবণ ও বিভিন্ন মশলার সংমিশ্রণে তৈরি একধরণের বিশেষ মশলা। সঙ্গে দেওয়া হয় সরিষার তৈল, কাঁচামরিচ ও সালাত। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু লেবুর পিনিক।
বিজ্ঞাপন
লেবুর পিনিক ছাড়াও তার কাছে প্রায় সাত ধরণের খাবার পাওয়া যায়। সেগুলার মধ্যে রয়েছে বারো ভাজা, ভাঙচুর, লেবুচুর, ঝালমুড়ি, বাদাম মাখা, বোম্ববাজা, লাড্ডুচুর অন্যতম। প্রত্যেকটা খাবারের দাম ১০ টাকা করে নেন তিনি। এর মধ্যে আবার লেবুচুর, লেবু পিনিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের কাজ করে থাকলেও বর্তমানে সাজ্জাদ লেবুর পিনিকসহ ভাজা বিক্রি করাটাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। তার হাতের লেবুর পিনিক রাজশাহী গণ্ডি পেরিয়ে সারাদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে তিনি এই পেশাটাকেই অনেক বড় করতে চান।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন্ধুদের সঙ্গে খেতে এসেছে অদ্রিজা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চার বছর হতে চললো। এই সময়ের মধ্যে প্রায় সব সময়ই সাজ্জাদ ভাইয়ের এখানে এসে খাওয়া হয়। ভাই অনেক কোয়ালিটি মেনটেন করে খাবার তৈরি করে। এইজন্যই এখানে বেশি আশা হয়। আমার লেবুর পিনিক খুব বেশি পছন্দ না। আমার বেশিরভাগ সময় ভাঙচুর বা কাঁচা মরিচ দিয়ে তৈরি বোম খাওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই সাজ্জাদ ভাইকে দেখে আসছি। তিনি অনেক ভালো মানের খাবার তৈরি করেন। সাজ্জাদ ভাইয়ের বারোভাজা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। ক্লাস শেষে বন্ধুরা মিলে প্রায় খেতাম সেখানে। খাওয়ার সাথে সাথে আড্ডাও বেশ উপভোগ করি। শুনেছি ভাই প্রায় ২৬ বছর ধরে ভাজা বিক্রি করে আসছেন।
আরেক শিক্ষার্থী মৌনি বলেন, মাঝে মাঝে বাইর থেকে এখানে খেতে আসি। এখানকার খাবার খুবই সুস্বাদু। আর পেট মোটামুটি ভরে যায়। সাজ্জাদ ভাই অনেক ফেমাস ও ভালো। লেবুর পিনিকটা আমার খুবই টেস্ট লাগে। তবে মরিচ দিয়ে যেটা তেরি করে বোম ওটাই বেশি খাওয়া হয়।
সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এমাজ উদ্দিন বলেন, অনেক দিন থেকে সাজ্জাদকে দেখে আসছি। সে আগে শুধু ভাজা বিক্রি করলেও বর্তমানে সে অনেক রকমের খাবার বিক্রি করে। তার হাতের লেবুর পিনিক খুবই সুস্বাদু। বর্তমানে দেখি তার তৈরি ভাজা বা লেবুর পিনিক খেতে অনেকেই ভিড় করে।
এবিষয়ে কথা হয় সাজ্জাদের সাথে। তিনি বলেন, 'ব্যবসার বয়স মেলা। প্রায় ২৬ বছর ধরে ব্যবসা করছি। তবে ভাজা, লেবুচুর বিক্রি করা শুরু করি ১২ বছর আগে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থাকা হয়। বর্তমানে অনেক ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বড় করার চিন্তা আছে। এখন আল্লাহ যদি সহায় হয়।'
জুবায়ের জিসান/আরকে