দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এতে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিনামূল্যের ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’।

গত বছরের ২৫ জুন এই সেবা কার্যক্রম শুরু করেন ছাত্রলীগের তিন নেতা। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, উপ-বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ। তখন থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সেবা দিয়ে আসছেন তারা। ফোন করলেই বাসায় পোঁছে দেওয়া হয় অক্সিজেন সিলিন্ডার। বর্তমানে ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে৷

এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন ছাত্রলীগের এই নেতারা। তবে করোনা সংক্রমণ আবারও তীব্রভাবে বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে বলে জানান প্রধান উদ্যোক্তা সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তিনি জানান, আমরা যখন এই সেবা শুরু করেছিলাম, সেই সময়ের চেয়ে এখন কয়েকগুণ বেশি সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে। প্রতিদিনই ১২-১৫ জনকে আমরা সেবা দিচ্ছি, যদিও চাহিদা আরও বেশি। তাছাড়া সবাই যথাসময়ে সিলিন্ডার জমা না দেওয়ায় আমরাও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের এখন প্রায় ১০০টি সিলিন্ডার আছে, আরও কিছু সিলিন্ডার কেনার চেষ্টা করছি।

কেন এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন? জানতে চাইলে সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়। জুন, জুলাইয়ে প্রকট আকার ধারণ করলে বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার উধাও হয়ে যায়। পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, এক শ্রেণির মানুষ অক্সিজেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে ২০ মিনিট অক্সিজেন সেবা দিয়ে বিনিময়ে ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিচ্ছে। তখনই মূলত আমরা এই সেবা দেওয়ার চিন্তা করি।’

এই সেবা পরিচালনায় আর্থিক সহযোগিতা কারা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নিজেরা এবং আমাদের পরিবারের মাধ্যমে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি। তাছাড়া সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমাদের সহযোগিতা করছেন। আর্থিক হিসেবটা আমরা প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়ে দেই। মাসের শেষেও একটি হিসেব দেই।

এই সেবা কার্যক্রমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ ১৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক যুক্ত আছেন বলে জানান সাদ।

আরেক উদ্যোক্তা ঢাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো ১০ মাস ধরে কাজ করছি। প্রথমদিকের চেয়ে এখনকার কন্ডিশন কয়েকগুণ বেশি খারাপ। যে কারণে মানুষের অত্যধিক পরিমাণে অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। আমরা মানুষের শতভাগ চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি মানুষের পাশে থাকতে। আমরা আশাকরি মানুষ ঘরে থাকবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে।

সেবা নিতে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের তিনজনের নাম্বার দেওয়া আছে। এছাড়া জেলাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবকদের নাম্বারও দেওয়া আছে। নাম্বারগুলোতে যোগাযোগ করলেই আমরা সেবা পৌঁছে দিচ্ছি।

এদিকে সংকটের মুহূর্তে এমন সেবা পেয়ে খুশি সাধারণ মানুষ। তারা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন উদ্যোক্তাদের প্রতি। অক্সিজেন সেবা নেওয়া তানভীর রহমান বলেন, গত রাতে হঠাৎ করেই মনে হচ্ছিল মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি। হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন নেওয়াটাও জরুরি হয়ে পড়ে, ফোন দেই জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের সাদ বিন কাদের চৌধুরী ভাইকে। কিন্তু কোনো সিলিন্ডার ফাঁকা ছিল না, অনেক চেষ্টার পরও কোনো সিলিন্ডার ম্যানেজ হচ্ছিল না। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত একটার পর একটি সিলিন্ডার ম্যানেজ করে টিএসসিতে পাঠিয়ে দেন সাদ ভাই। চিরকৃতজ্ঞতা সাদ ভাই এবং জয়বাংলা অক্সিজেন সার্ভিসের প্রতি।

সেবা পেতে যোগাযোগের নাম্বার-
সাদ বিন কাদের চৌধুরী: ০১৯১১-৮২১৮৮৪
সবুর খান কলিন্স: ০১৭১১-১৭৩৪০৫
রফিকুল ইসলাম সবুজ: ০১৭২৫-৩৪৩০৩৮

এইচআর/এসএসএইচ