অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে সেখানেই কর্মরত হাফিজুর রহমান। তার জীবনের গল্প শুনেছেন ঢাকা পোস্টের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক মাহতাব লিমন। 

ঢাকা পোস্ট : কেমন আছেন?  

হাফিজুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। 

ঢাকা পোস্ট : আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন? এছাড়া বর্তমানে কি করেছেন?  

হাফিজুর রহমান : আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরে কম্পিউটার কাম অপারেটর হিসেবে কর্মরত আছি। 

ঢাকা পোস্ট :  আপনি যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত রয়েছেন আপনার অনুভূতি জানতে চাই? 

হাফিজুর রহমান : আসলে আমি আজকে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি তার নেপথ্যে ছিলো আমার অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছাশক্তি ও সকলের নিঃস্বার্থ সহযোগিতা। আর সবচেয়ে ভালো লাগছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন চুকিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই আমার রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। আমার এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। 

ঢাকা পোস্ট : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু আবাসন ব্যবস্থা নেই তো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কি কি সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়? 

হাফিজুর রহমান : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হল না থাকায় সকল শিক্ষার্থীদের আবসনের সমস্যা প্রকট আকারে। পুরান ঢাকা এমনিতেই জনবহুল একটি এলাকা। এই জনবহুল এলাকা ও মাত্রাতিরিক্ত যানজট উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের মেসে থাকা যে কতটা কষ্টকর তা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাই ভালো করে জানেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একটি আবাসনের ব্যবস্থা করলে এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অনেক বড় ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। 

প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে নিজেদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। কখনোই মনোবল হারাবেন না। শেষ মুহূর্তে মনোবল ধরে না রাখতে পারলে আপনার জীবনের সকল পরিশ্রম হয়তো নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেদের মনোবল ধরে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হবেন।

ঢাকা পোস্ট:  প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি কি কাজ করলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন?  

হাফিজুর রহমান : শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অনেক সুযোগ সুবিধা ইতোমধ্যে দিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও পরীক্ষার ফি মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া বাক-প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে কোথায় কোন ভবনের অবস্থান ও বিভাগগুলো তা যদি একটি মানচিত্রের মাধ্যমে কোথাও স্থাপন করা হয় তাহলে ক্যাম্পাসের সকল কিছু নির্ধারণ করতে ওই শিক্ষার্থীর জন্য সহজ হয়। এছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য যদি ব্রেইল পদ্ধতি মাধ্যমে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা চালু করা হয় তাহলে ওই দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতো না। অন্যদিকে শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ার এর ব্যবস্থার মাধ্যমে তার চলাফেরার সুযোগসহ নতুন ক্যাম্পাসে প্রতিটি ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।

ঢাকা পোস্ট : প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বর্তমানে ক্যাম্পাসে কোনো সংগঠন কাজ করছে কি?

হাফিজুর রহমান : হ্যাঁ। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যে কোনো প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তর সর্বদা তাদের পাশে আছে। তারা যদি একাডেমিক থেকে যে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় আর তা যদি তারা ছাত্রকল্যাণকে অভিহিত করে তাহলে তাদের সে সমস্যা সমাধানের জন্য ছাত্রকল্যাণ দপ্তর সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও পিডিএফ নামে একটি সংগঠন প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে থাকে। 

ঢাকা পোস্ট : প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?  

হাফিজুর রহমান : এ ক্ষেত্রে একটি কথাই বলবো সেটা হলো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রতি সহপাঠী, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা না থাকতো তাহলে এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা কোনোভাবেই চালিয়ে যেতে পারতো না৷ যেহেতু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবার থাকে না তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের পরিবারের সেই অভাব পূরণ করে থাকে। 

ঢাকা পোস্ট : একটা সময় ছিল, যখন প্রতিবন্ধীদেরকে আমাদের পরিবার, সমাজ একটু ভিন্ন চোখে দেখতো। বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের পরিবার, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা বদলেছে? 

হাফিজুর রহমান : আমি মনে করি আমাদের দেশের সরকার প্রতিবন্ধীদের জীবনমানের উন্নতি অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। পরিবার সমাজে যে প্রতিবন্ধীরা একটা সময়ে বোঝা হয়ে ছিল সেটা আমাদের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার কারণে পূর্বের সেই দৃষ্টিভঙ্গি আর লক্ষ্য করা যায় না।

ঢাকা পোস্ট : বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি থাকবে?

হাফিজুর রহমান : আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫০ এর অধিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। আমি জানি সকলেই জীবনের একটি কঠিন সময় পার করছেন। আমি বিশ্বাস করি আপনারা আপনাদের সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে নিজেদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। কখনোই মনোবল হারাবেন না। শেষ মুহূর্তে মনোবল ধরে না রাখতে পারলে আপনার জীবনের সকল পরিশ্রম হয়তো নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেদের মনোবল ধরে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হবেন সেটাই প্রত্যাশা।

ঢাকা পোস্ট : ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন। 

হাফিজুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ। 

এমএল/এমএসএ