রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি আবাসিক হলের নিচতলায় একটি করে বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন ওয়াশরুম নির্মাণ করতে হল প্রশাসনকে নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে অনুমোদনের একবছর পার হলেও এখনো শুরু হয়নি সেই কাজ। কয়েকটি হলের নিচতলার বাথরুমে কমোড বসানো হলেও নেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বিশেষ সুবিধা। হল প্রাধ্যক্ষদের অনাগ্রহের কারণেই কাজ বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি প্রকৌশলী দপ্তরের।

এদিকে অনুমোদনের এক বছর পরেও কেন হলগুলোতে ওয়াশরুমের কাজ শুরু হয়নি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ওয়াশরুমের সব কাজ প্রস্তুত হয়ে আছে। হল প্রাধ্যক্ষরা তাদের হলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী কোন ধরনের ওয়াশরুম নির্মাণ হবে সে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে অবহিত করলেই তিনি কাজ শুরু করতে পারবেন। 

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি আবাসিক হলের নিচতলায় একটি করে আধুনিকায়ন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্য ওয়াশরুম নির্মাণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হাইকমোড, টাইলস ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আরও বিশেষ সুবিধা থাকবে। নির্দেশনাতে বলা হয় এ ওয়াশরুম শুধু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরাই ব্যবহার করতে পারবেন। 

এক হাতে সমস্যা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন মাসুদ নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার শৌচাগারের কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেগ পেতে হয়। ভেবেছিলাম অতিদ্রুতই আমাদের সমস্যা চিহ্নিত করে আলাদা ওয়াশরুম করে দেবে প্রশাসন। কিন্তু তা এখনো হয়নি। যেসব হলে আমাদের জন্য ওয়াশরুম করা হয়েছে সেগুলো আমাদের সমস্যা চিহ্নিত না করে বসানো হয়েছে, ফলে আমাদের কাজে আসছে না।

রাবির ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হাসান বাবু বলেন, একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য সাধারণ ওয়াশরুম ব্যবহার করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তাই তাদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নির্মাণ করতে এক বছর আগে নির্দেশনা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু নির্দেশনার এক বছর পার হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি কেন? স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিজের দায়িত্বের প্রতি এমন উদাসীন হওয়াটা আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা চাই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নির্মাণ করবে প্রশাসন। এ বিষয়ে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতিটি আবাসিক হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নির্মাণের নির্দেশনা আমরা অনেক আগে থেকেই পেয়েছি। সবধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিন্তু এক নয়। হল প্রভোস্টরা আমাদেরকে বলবেন, আমাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এ ধরনের ওয়াশরুম প্রয়োজন। তাহলে সেই অনুযায়ী ওয়াশরুম নির্মাণ করে দেব। তারা এখনো আমাদেরকে বিষয়গুলো জানায়নি। তবে অতিদ্রুতই এসব ওয়াশরুমের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমার হলসহ দু-একটি হলের ওয়াশরুমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কমোড বসানো হয়েছে। তবে সেখানে আরও উন্নত করার জন্য আমার প্রকৌশলী দপ্তরকে জানিয়েছি। বাজেট স্বল্পতায় করতে পারেনি। তারা তবে এখন করে দিবে বলে জানিয়েছেন তারা। বাকিগুলোতে হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করতে নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।

জুবায়ের জিসান/আরকে