ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) কমতে কমতে তলানিতে পৌঁছেছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। টিউশন ফি বৃদ্ধি, সেশনজট, ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব, ইন্টারনেট সমস্যাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিতে অনীহা বিদেশি শিক্ষার্থীদের। আর যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভর্তি বাতিল না করেই নিজ দেশে ফিরেছেন।

জানা যায়, গত কয়েক বছরে কমেছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। আগের বছরগুলোতে প্রতি সেশনে ১৪ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একজনও শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এ ছাড়া ২০২১-২২ সেশনে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মাত্র একজন ভর্তি হয়েছিলেন। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডিতে মোট ৬০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। বর্তমানে অধ্যয়নরত রয়েছেন ২০ জন শিক্ষার্থী। করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছেন।

কয়েকজন বিদেশী শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর অর্ধেকও পাচ্ছি না। হলে ইন্টারনেট সমস্যা। আমরা পরিবারের সঙ্গেও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি না। আমরা ৪ বছরের ভিসায় এসেছি। তবে সেশনজটের ফলে নতুন করে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া সুপেয় পানির অভাব। একটা পানি রিফাইনারীর মেশিন থাকলেও কয়েকদিন পরপর নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আমাদের জন্য কোনো আলাদা ক্যান্টিন ব্যবস্থা নেই।

শিক্ষার্থী কমার পেছনে ফরেন সেলের অফিস না থাকা এবং এখানে নির্বাচিত লোকবল সংকটকে দায়ী করেছেন ওই অফিসের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট অফিস না থাকায় শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা যোগাযোগ করতে না পারার ফলে দিনদিন কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। এছাড়া এখানকার কর্মকর্তাদের ভাতা না দেওয়ায় তারা কাজ করতে চান না।

নেপাল থেকে আসা ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আশীর্বাদ ইয়াদব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না।  অন্যদিকে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হলেও সব ফি গুণতে হয়। খরচ বেশি পড়ে যাওয়ায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে চলে যাচ্ছে।  

ফরেন সেলের কর্মকর্তা সাহদৎ হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট লোকবল না থাকায় শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করতে পারেন না। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করি। ফরেন সেলের কোনো অবদান নেই। আমরা দীর্ঘদিন কাজ করছি এজন্য কোনো ভাতা হয় না।

ফরেন সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামাল হ্যাপী বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্কলারশিপ দেয় শিক্ষার্থীদেরকে। কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। এজন্য আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। তারপরও একাডেমিক মান ভালো থাকলে অনেকেই আসত।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, স্কলারশিপ না পাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার বড় কারণ বলে আমি মনে করি। অন্য দেশগুলোতে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ থাকে। এখানে যে সুবিধাও নেই। বিভাগগুলোও তার নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে চললে এতো সংকটে পড়তে হতো না। সবাই নিজ দায়িত্ব পালন করলে তবেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে।

রাকিব হোসেন/আরকে