সর্বজনীন পেনশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে কালো ব্যাজ ধারণ ও মৌন মিছিল করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিল করেন বেরোবি শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। এ সময় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও মিডিয়া চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে যোগদানকৃতদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা বৈষম্যমূলক। এ ধরনের বৈষম্য বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে শিক্ষাদর্শনের চেতনা থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন, এ প্রজ্ঞাপন সেই চেতনাকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করার শামিল।

তিনি আরও বলেন, সর্বজনীন বলতে আমরা বুঝি সবার জন্য। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের ওপর যে স্কিম চালু করা হচ্ছে, এটি খুবই বৈষম্যমূলক। প্রত্যয় স্কিমটি নামে সর্বজনীন হলেও আদতে সর্বজনীন নয়। সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান- সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে একে সর্বজনীন বলার সুযোগ নেই। স্কিমটি যদি সত্যিই সর্বজনীন হয়ে থাকে তবে একে অধিকতর সর্বজনীন করার জন্য সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগকেও এর আওতায় আনা হোক। তা না হলে তড়িঘড়ি করে জারি করা এই অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক স্কিম অবিলম্বে বাতিল করা হোক।

সর্বজনীন পেনশনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাভ-ক্ষতি তুলে ধরে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডল বলেন, এই স্কিম চালু হলে দেশের স্বশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর গ্রহণকারী কর্মীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা খাতে মেধাবীরা ভবিষ্যতে অনাগ্রহী হবেন। বর্তমানে প্রচলিত অবসর ভাতাকে প্রতি বছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমের আওতায় স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য তা বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ বছর চাকরি করলেই একজন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা নির্ধারিত হারে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হন; অথচ প্রত্যয় স্কিমের আওতায় চাকরির সময় ১০ বছরের কম হলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শুধু জমাকৃত অর্থ ও এর মুনাফা একবারে প্রাপ্য হবেন। এতে এসব কর্মীর পরিবারগুলোর যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। অথচ বৈষম্যমূলকভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের পরিবারই আগের নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হবেন। বর্তমান পেনশন ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক পেনশন থাকার কারণে অবসরভোগীর অবর্তমানে তার স্ত্রী বা স্বামী কিংবা প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পাবেন। এমনকি তার অবিবাহিত মেয়েরাও এর কিছু সুবিধা পাবেন। এর সঙ্গে মূল অবসরভোগীর বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ প্রত্যয় স্কিমে অবসরভোগী কর্মী ৭৫ বছর বয়সে মারা গেলে তার পরিবারের কোনো সদস্য আর কোনো সুবিধা পাবেন না।

সর্বজনীন পেনশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রত্যাহার না করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয়ে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক নেতারা।

শিপন তালুকদার/এমজেইউ