রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে ঘিরে পিছু ছাড়ছে না বির্তক। এবার নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ১৪১ জনের অস্থায়ী নিয়োগ নিয়ে।

নিজের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার (৬ মে) ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী পদে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দেন বিদায়ী উপাচার্য। যদিও নিয়োগের নথিতে আগের দিন সই করেছেন একজন উপ-রেজিস্ট্রার।

নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও স্বজন, ছাত্রলীগের ৪৩ সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মী, চারজন সাংবাদিক নেতা ও একজন সাংবাদিকের বোন রয়েছেন। কেবল তাই নয়; পারিবারিক নাপিত, কাঠমিস্ত্রি ও মালির স্ত্রীকে চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য।

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেওয়া এই নিয়োগ ‘অবৈধ’ ও ‘বিধিবর্হিভূত’ উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এই নিয়োগে জড়িতদের চিহ্নিত করতে শনিবার (৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত কাজ শুরু করেছে উচ্চ পর্যায়ের চার সদস্যের তদন্ত দল। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুয়ার্ড শাখায় নিরাপত্তা প্রহরী পদে অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন শামসুল আলম। তার বাবার নাম মৃত হায়াত আলী। নিয়োগ তালিকায় ১৪ নম্বরে রয়েছে তার নাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামসুল আলম দীর্ঘ দিন ধরে উপাচার্য আব্দুস সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের চুল কাটতেন। তার পরিবারের যাবতীয় আসবাবপত্র তৈরি করতেন কাঠমিস্ত্রি আব্দুস সামাদ রাজন। তাকেও নিরাশ করেননি উপাচার্য। রাজনকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রকৌশল দফতর শাখায় কাঠমিস্ত্রি পদে। রাজন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলার ধরমপুর এলাকার আবদুস সোবাহান কাঁচুর ছেলে। 

উপাচার্যের বাসভবনে মালির কাজ করতেন সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী মিনু খাতুন ওই বাসভবনে গৃহপরিচারিকা ছিলেন। তার বাবার নাম ওজিউল্লাহ। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আয়া পদে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য। নিয়োগের এই তালিকায় ১১ নম্বরে রয়েছে তার নাম।

দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়াই দেওয়া হয়েছে শিক্ষক নিয়োগ। নিয়োগের আগে ফিন্যান্স কমিটির সভায় এসব পদের বিপরীতে বেতন-ভাতা পাস হয়নি। এমনকি সিন্ডিকেট সভায়ও এই নিয়োগের বিষয়ে রিপোর্ট করে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। ইউজিসি যদি অ্যাডহকের বেতন দিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন ক্যাম্পাসে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে।

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগ অবৈধ মর্মে তাদের মতামত দিয়েছে। তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করছে। কাজেই রুটিন দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে আমি তাদের কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে পজিটিভ কিছু বলতে পারছি না।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি