জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেউ বিষয়টি স্বীকার করছে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ হাজার ৯২১ জন। এর মধ্যে টিকা গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রথমে আবেদন করেছেন ৯ হাজার ৫২০ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরে এ তালিকা পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর পরই ‘সুরক্ষা.গভ.বিডি’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসব শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণের আবেদন করতে পারেন। ১১ মার্চ তালিকা পাঠানো হলেও এরপর আরও কয়েক দফায় টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত গুগল ফরমের মাধ্যমেই তারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং সরকারের ‘সুরক্ষা.গভ.বিডি’ ওয়েবসাইটে গিয়ে শিক্ষার্থী অপশন বেছে নিয়ে টিকার জন্য আবেদন করেছেন। এরপর কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করার পর শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের অনুমোদন সংবলিত টিকা দেওয়ার তারিখ, কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে বার্তা দিয়েছে। এছাড়াও পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণের সনদও গ্রহণ করেছেন।

তবে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ টিকা গ্রহণ করলেও অস্বীকার করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষ্য- টিকা প্রদানের লক্ষ্যে তালিকা সংগ্রহ করা হলেও শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেব। 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- টিকা প্রদানের তথ্য প্রকাশ করলে প্রশাসন ও সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে। ফলে তথ্য গোপন করে মূলত দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে চাচ্ছে প্রশাসন।  

এদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলে গত ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। যেখানে যেসকল শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছে তাদের তথ্য জানতে চাওয়া হয়। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছেন এ সম্পর্কে এক জরিপ চালিয়েছেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিনিধি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ নামে অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে এ জরিপ চালানো হয়। যেখানে দেখা যায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলমান টিকা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের তালিকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আমাদের কাছে শিক্ষার্থীর তালিকা চেয়েছে। আমরা সেটা দিয়েছি। আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ করেছিলাম তারা আমাকে জানিয়েছে- এবার টিকা আসলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। 

তবে ইতোমধ্যে যেসব শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ করেছেন তারা কীভাবে টিকা পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রহিমা কানিজ বলেন, কিছু শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে বলে আমি শুনেছি, তবে কনফার্ম না। আমি ঠিক এ ব্যাপারে বলতে পারবো না। যদি শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়ে থাকে তবে তারা অনৈতিক কাজ করেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের নৈতিকতা ধরে রাখতে পারেনি। টিকা নেওয়ার সুযোগ ছিল শুধুমাত্র শিক্ষক-কর্মচারীদের। মাঝে অনেকদিন টিকা দেওয়া বন্ধ ছিল। আমরা আইডেন্টিফাই করতে পেরেছি কিছু কিছু শিক্ষার্থী অনৈতিকভাবে টিকা গ্রহণ করছেন, এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে টিকা নেওয়া শিক্ষার্থী ও জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা টিকা গ্রহণ করেছি সম্পূর্ণ নৈতিক উপায়ে। সুরক্ষা অ্যাপে শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের অপশন ছিল। টিকা গ্রহণের এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবগত ছিল। এতে কোনো ভুল থাকলে তারা তা জানাতে পারত। তা না করে টিকা গ্রহণের তথ্য জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে সম্প্রতি। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই প্রমাণ হয় যে প্রশাসন সবই জানত। এখন হুট করে এসে টিকা গ্রহণের এই প্রক্রিয়াকে অনৈতিক আখ্যা দেওয়া স্পষ্টতই শিক্ষার্থীদেরকে অপমান করার শামিল। 

তিনি আরও বলেন, জাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই টিকা নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরই ক্যাম্পাস সচল করতে উদ্যোগী হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। শিক্ষার্থীদের দায় দেওয়া, টিকা গ্রহণ প্রক্রিয়ার ব্যাপারটিকে অস্বীকার করা এসবের উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে যত বেশি দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের অসঙ্গতিগুলো আড়াল করা যায়।

জাবি শিক্ষার্থীরা টিকা পেয়েছেন কিনা কিংবা পেলেও কোন প্রক্রিয়ায় পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা টিকা নিয়েছে কিনা বা কীভাবে নিল আমি বিষয়টা জানি না। বিষয়টা আমি খোঁজ নিব। তবে সিনোফার্ম থেকে আরও কিছু টিকা আসার কথা রয়েছে। সেগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের দেওয়া শুরু করব।

আরএআর