জাবিতে ভবন নির্মাণের জন্য উপড়ে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ল্যাব ও শিক্ষক কক্ষের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে একাডেমিক কার্যক্রম। এ সংকট নিরসনে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ কাজের জন্য সেগুন ও কাঁঠালসহ অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন গাছগুলো উপড়ে ফেলেন। গাছ কাটার সময় সেখানে ভবন নির্মাণের পক্ষে অবস্থান নেন গণিত বিভাগের একদল শিক্ষার্থী। গাছ কাটার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরা। তারা গাছ কাটার বৈধতা ও প্রশাসনের দায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ২০ এপ্রিল ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে টিনের বেড়া দিয়ে গাছ কাটার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে বিষয়টি তখন স্থগিত করা হয়। উপাচার্য তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণের পরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই গাছ উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটল।
এদিকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে আসেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, গাছ কাটার বিষয়ে তারা কেউ অবগত ছিলেন না। পরে উপাচার্যের নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়, যদিও ততক্ষণে অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়।
বিজ্ঞাপন
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জাবি শাখার সংগঠক সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান এখনো তৈরি হচ্ছে। অথচ তার আগেই গাছ কাটা শুরু হয়েছে। পিডিও জানেন না, উপাচার্যও অবগত নন—এটা কীভাবে সম্ভব? আমরা জানতে চাই, কার নির্দেশে গাছ কাটা হলো? যদি দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আমরা আইনি পথে যাব।
গণিত বিভাগ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) আবু রুম্মান বলেন, আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি বজায় থাকুক। আমরা গাছ কাটার বিপক্ষে। তবে আমাদের শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও শিক্ষক কক্ষের তীব্র সংকট রয়েছে। আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখতে ভবন নির্মাণ জরুরি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পরামর্শ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হবে। কারণ, ভবনের প্রয়োজন আছে, তবে পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। অথচ আমাকে না জানিয়ে এভাবে গাছ কাটা হয়েছে। বিষয়টি জানতে আজই প্রশাসনিক সভা ডাকা হবে।
মেহেরব হোসেন/এমএএস