অন্যায়-নির্যাতনে জড়িত বাকৃবির ১৫৪ জনকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিগত ১৬ বছরের অন্যায়, জুলুম ও নির্যাতনের অভিযোগসমূহের বিচারের জন্য গঠিত গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৫৭ জন শিক্ষক, ২৪ জন কর্মকর্তা, ২১ জন কর্মচারী এবং ৩১ জন শিক্ষার্থীসহ মোট ১৫৪ জনকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো হেলাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গত ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৩২৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ আগস্ট ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ স্লোগানে শান্তি মিছিলে যোগদান এবং গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এবং বিগত ১৬ বিছরে বাকৃবিতে বিচার না হওয়া অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে এই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের শাস্তির মধ্যে অন্যতম বাকৃবি ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে ২৩ ডিসেম্বর আশরাফুল হক হলে বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চারজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদল ও শিবির ট্যাগ দিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতনকারী ১৮ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক ও ১ জন কর্মচারীকে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার এবং ১৫ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১ জন শিক্ষককে নিম্নপদে অবনমন, আরেকজন শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত এবং একজন কর্মকর্তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া শাস্তিপ্রাপ্ত আরও ৫৭ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষকদের মধ্যে ৬ জনকে বরখাস্ত, ১২ জনকে অপসারণ, ৮ জনকে নিম্নপদে অবনমন এবং ৩১ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ৮ জনকে বহিষ্কার, ৮ জনকে অপসারণ, ৭ জনকে তিরস্কার এবং ১ জনকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কর্মচারীদের মধ্যে ২ জনকে বরখাস্ত এবং ১৯ জনকে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জনকে আজীবন বহিষ্কার এবং ২৪ জনের সনদপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এসব শাস্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিগত ৪ আগস্ট ২০২৪ বাকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ‘শান্তি মিছিল’ নামে একটি সন্ত্রাসী মিছিল আয়োজন করে। এই মিছিলে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ এবং ‘ঘরে ঘরে খবর দে, এক দফার কবর দে’— এই ধরনের উসকানিমূলক ও সহিংস স্লোগান দিয়ে তারা খুনি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন ও গণহত্যার পক্ষে প্রচারণা চালায়। এ সময় নিরীহ ছাত্র ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবিহীন ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যা শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম— ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপে— বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-শিক্ষকদেরকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, তদন্ত কমিটি বিভিন্ন আলোচনা, সাক্ষাৎকার, তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তি সুপারিশ করেছে এবং সেগুলোকে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ মে সিন্ডিকেট সভায় এই শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তী সভায় পরিসমর্থন হয়েছে। ৩ জন শিক্ষক এরই মধ্যে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন যে, তদন্ত কমিটি বৈধ নয়। সে রিট গতকাল খারিজ হয়েছে। আজকে থেকে তাদের শাস্তি সংক্রান্ত কাগজ বিলি হচ্ছে।
মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর/আরএআর