তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 

মানববন্ধনে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, গত ১৭ বছর খুনি হাসিনা সরকার বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট রেজিম কায়েম করতে গিয়ে বারবার বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত করেছিল। যখনই ভারতের সাথে কোনো এগ্রিমেন্ট করা হতো তখনই তারা বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য তাদের প্রভু ভারতের স্বার্থ হাসিল করতে দিতো। যার কারণে আজকে উত্তরবঙ্গের মানুষ জাতীয় অর্থনীতিতে পিছিয়ে আছে। আমরা তা আর হতে দেব না। আমরা সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলাম এবং থাকবো।  এই আন্দোলনে একত্মা প্রকাশ করে দ্রুত যেন তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু হয় এই দাবি জানাচ্ছি। 

মানববন্ধনে জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা সকলেই জানি তিস্তা হলো একটি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী। কিন্তু সেই অভিন্ন নদী হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিস্তা যেমন একটি আশীর্বাদের কারণ হয়, তেমনি আমাদের বাংলাদেশের জন্য সেই তিস্তাই আমাদের অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় শুকনা মৌসুমে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি বিগত সময়েও বিভিন্ন সরকার এসেছে, সরকার গিয়েছে কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কোনো সরকারি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়ার মত সাহস দেখিনি। তার অন্যতম একটি কারণ ছিল যদি আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় এবং তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হয় তাহলে হয়তো সেই আমাদের পার্শ্ববর্তী যে দেশ সেই ভারতের অধিকার ক্ষত হয়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে সরকার এসেছে সেই সরকারের কাছে আমাদের বহু আশা ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল। তারা শুধুমাত্র ঢাকামুখী বা রাজধানীবাসীর উন্নয়ন করবে না।  তারা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি উপজেলার, প্রতিটি থানার মানুষের ভাগ্য বদলানোর জন্য চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা দেখেছি উত্তরের ভাগ্য বদলানোর জন্য এই সরকার তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা সরকারকে আহ্বান করব, যে কোনো কূটনৈতিক চাপকে উপেক্ষা করে, ইন্ডিয়ান চাপকে উপেক্ষা করে, ইন্ডিয়ান স্বার্থকে উপেক্ষা করে অতি সত্তর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আপনারা কার্যক্রম শুরু করুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, শুধু উত্তরবঙ্গের জন্য নয়, বাংলাদেশের জন্যই তিস্তাকে বাঁচানো দরকার। আমি স্পষ্ট করে ভারতের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আপনাদের আগ্রাসী নীতি যদি বন্ধ না হয়, আপনারা যদি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হন, তবে আপনারাও জেনে রাখুন আমরা ৭১ সালে পাকিস্তানকে যেভাবে প্রতিহত করেছি, আপনাদেরকেও প্রতিহত করার জন্যও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা বারবার দেখেছি বাংলাদেশের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশি হিসেবে আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার জুলুম চাপিয়ে দিয়েছেন। যখনই আপনাদের স্বার্থের সাথে মিলেছে তখনই কেবল আপনারা বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এই কারণে যে নভেম্বরে যদি কাজ শুরু না হয় তাহলে আমরা আরও এক বছর পিছিয়ে যাব। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে অতি দ্রুত আপনারা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ছাত্র সংসদের ভিপি জি এম রায়হান মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন। 

আরএআর