রাকসু নির্বাচনের এক মাস : দৃশ্যমান হয়নি কোনো প্রতিশ্রুতি
রাকসু নির্বাচনের এক মাস পেরিয়ে গেছে। ৩৫ বছর পর ফিরে পাওয়া এই ছাত্রসংসদকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা। হল বা একাডেমিক ভবনের সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা নির্বাচিত নেতাদের প্রতি। কিন্তু এক মাস পার হলেও দৃশ্যমান কোনো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম দেখা না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত রাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কিছু ছোটখাটো কাজ শুরু করলেও বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন হবে।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি পদের মধ্যে ২০টি তে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন। তারা ১২ মাসে ২৪ সংস্কারের ইশতেহার দেয়। প্রতিমাসে দুইটি করে কাজ তারা করতে চেয়েছিল। তবে এক মাস পেরলেও একটি ইশতেহারও বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা।
রাকসুতে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শেখ নূর-উদ্দীন আবীর বলেন, “নির্বাচনের এক মাস পার হলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হয়নি। এটি দুঃখজনক এবং শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতি উপেক্ষার শামিল। রাকসু পুনরুজ্জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা। কিন্তু নির্বাচন শেষে পুরো প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন জাগছে- এটি কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা ছিল?”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, রাকসুকে দ্রুত সক্রিয় করতে হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্যাম্পাসের আবাসন, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ এনে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, শপথ নেওয়ার পর ২২ দিন হয়ে গেলেও আমরা প্রশাসনের কোনো সহায়তা পাইনি। তাদের সহযোগিতা ছাড়াই আন্তঃহল বিতর্ক উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। খাবারের মান নিয়মিত মনিটরিং করায় দোকানিরা এখন অনেক সচেতন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মেয়েদের জিমনেসিয়াম চালু করেছি, বাফুফে থেকে খেলাধুলার সরঞ্জাম পেয়েছি, মাঠ সংস্কার, নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক–সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। এ মাসের ২৩ তারিখ ক্লিন ক্যাম্পাস কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভিসি স্যার চীন সফরে থাকায় অনেক কাজ আটকে আছে। তার স্বাক্ষর ছাড়া বাজেট পাস হচ্ছে না। আমাদের প্রায় ৫৪টা এজেন্ডা আটকে আছে।
রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমরা বেশ কিছু কাজ করেছি এবং কিছু কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। রাকসুর বরাদ্দ বুঝে পেলে কাজগুলো দ্রুত এগোতে পারত। এই মাসেও ফিল্টার স্থাপন, রুয়ার থেকে ই–কার প্রাপ্তি, সাহিত্য ও বিতর্ক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ ইশতেহারের প্রতিশ্রুত কাজগুলো শুরু করার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ অক্টোবর। এতে, ভিপি পদে নির্বাচিত হন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন সালাহউদ্দিন আম্মার। নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি পদের মধ্যে ২০টি তে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেল ২৪ দফা ইশতেহারের ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন, মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা, অনাবসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ, শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ, লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সম্প্রসারণ ও সংস্কার, শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকরণ, প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন, চিকিৎসা কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা চালু করার কথাও বলা হয়েছে।
এছাড়া, পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণ, নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা, টিচার্স ইভ্যালুয়েশন, তথ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, অন ক্যাম্পাস জব, পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, ক্ষুদ্র নিগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষা, সংস্কৃতির বৈচিত্র্যায়ন, হাইজেনিক স্যানিটাইজেশন, ক্রীড়া উন্নয়ন, সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠন, ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাস, অপরাধ দমনে সেল গঠনের কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
আরকে