এখানেই মরে যাব, তবুও কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের বাসভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি তাদের নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করে যোগদান স্থগিত রাখতে বলেছে। মঙ্গলবার (২২ জুন) রাত ১০টা থেকে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা এ নতুন কর্মসূচি শুরু করেছেন। বুধবার (২৩ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত তারা সেখানেই ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চাকরিতে যোগদানের অনুমতি ও সিন্ডিকেট সভা বন্ধের জন্য উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশপথে অবস্থান নেন অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা। এ সময় তারা উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশপথে বসে ও শুয়ে পড়েন।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. তারেক নূর ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও চাকরিতে যোগদানের অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে তারা লাগাতার অবস্থান করবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি থেকে তারা সরে দাঁড়াবেন না।
বিজ্ঞাপন
এদিকে চাকরিতে যোগদান না করা পর্যন্ত সিন্ডিকেট সভা বন্ধে নিজেদের অবস্থানে অনঢ় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। পরে রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা তার বাসভবনের সামনে রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভা স্থগিত ঘোষণা করেন। এরপরও তারা সেখানেই অবস্থান করেন এবং রাত ১০টায় লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
এদিকে একটানা অবস্থান নেওয়ায় তাদের বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেখানে অবস্থানকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহাফুজ আল আমিন বলেন, আমাদের একটাই দাবি আমাদের কাজে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হোক। পরে যা হওয়ার হবে। গত পরশু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ক্যাম্পাসে এসেছিলেন এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারপরও আমাদের নিয়োগের বিষয়টি সমাধান না করেই সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে। আমরা এজন্যই আন্দোলনে বসেছি। কাজে যোগদানের বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও তিনি জানান।
অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ডিলস বলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান স্যার গত ৫ মে আমাদের ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১২ (৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে অ্যাডহকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা পরদিন ৬ মে রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে যোগদান করেছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী ও নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ দিলেও বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিউৎসাহী হয়ে আমাদের নিজ নিজ দফতরে যোগদানের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে। দেড় মাস ধরে বর্তমান রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা আশ্বাস দিয়েও আমাদের কাজে যোগদানের কোনো ব্যবস্থা করেননি। ফলে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। দুঃশ্চিতায় ঘুমাতে পারছি না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের পদায়নের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে এখানেই মরে যাব, তবুও কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না।
উল্লেখ্য, গত ০৫ মে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ১৩৭ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে যান। কিন্তু সে নিয়োগকে ওই দিনই অবৈধ আখ্যায়িত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর ৮ মে রুটিন উপাচার্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজে যোগদান স্থগিত করেন।
মেশকাত মিশু/আরএআর