চোখে কিছুই দেখতে পান না, তবুও সহজেই চিনে ফেলেন যেকোনো টাকার নোট। হাতে ধরে নোটের সাইজ ও অনুভূতিই তাকে বলে দেয় এটি কত টাকার নোট। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বিরুনি হলের পাশে অবস্থিত মনির স্টোরের মালিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনির হোসেন প্রায় ২২ বছর ধরে তার এ দোকান চালিয়ে আসছেন। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. সেলিম আল-দীনের সহযোগিতায় তিনি স্থায়ীভাবে এই ব্যবসা শুরু করেন।

বর্তমানে আল-বিরুনি হলসংলগ্ন স্থানে তার এ দোকানটি রয়েছে, যেখানে বিস্কুট, চিপস, কোমল পানীয়সহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী পাওয়া যায়।

মনির জানান, তিনি ২০০৩ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। শুরুতে ক্যাম্পাসজুড়ে ঘুরে ঘুরে কলম বিক্রি করতেন। তার পরিস্থিতি জানার পর ড. সেলিম আল-দীন তাকে একটি চেয়ার ও টেবিলের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি নিজস্ব দোকান গড়ে তোলেন এবং এখন সেখানেই নিয়মিত ব্যবসা করছেন।

১৯৭৯ সালের ১৭ মার্চ চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া মনির ৭ বছর বয়সে ঘুমন্ত অবস্থায় খাট থেকে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণের কারণে চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর দৃষ্টিশক্তি ক্রমেই কমতে থাকে এবং ১২ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টি হারান। বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে কিছু টাকা জমিয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও টাকা লেনদেন কীভাবে করেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, হাত দিয়ে নোটের সাইজ অনুভব করেই টাকা চিনতে পারেন তিনি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সবসময় লেনদেনে তাকে সহযোগিতা করেন। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তার সঙ্গে এবং বিভিন্ন সময়ে নানা রকম সহযোগিতা করেন।

এআরবি