করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ ৫৭০ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১১ অক্টোবর খুলতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ বন্ধের পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও রাখতে হচ্ছে গণরুম। ফলে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।

জাবি শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হলে আসন রয়েছে ৮ হাজার ২৭৮টি। এর বিপরীতে মোট শিক্ষার্থী ১২ হাজার ৯২১ জন। ফলে অংকের হিসাবে ৪ হাজারের বেশি আসন সংকট নিয়ে খুলতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও আসন সংকট সমাধানে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। এছাড়া অছাত্র ও হলের অবৈধ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সংকট দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসন সংকট ভোগান্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

আবাসন সংকটের কথা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হলে আসন সংকট আছে। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণরুম চালু করব। আগে শিক্ষার্থীরা এক রুমে ৫০ জন করে থাকতো আমরা সেখানে ২০ জনের ব্যবস্থা করব। এতে করে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’

তবে গণরুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের রাখা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তা ডাক্তার শামছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গণরুম না রাখার বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। তবে সেটা কতটুকু আমলে নেওয়া হচ্ছে সেটা একটা ব্যাপার। গণরুম রাখার ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। পাশাপাশি কোনো শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে প্রতিটা হলভিত্তিক যাতে আলাদা আইসোলেশন রুম রাখা হয় সে প্রস্তাবও রেখেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের প্রাধ্যক্ষ ও অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আয়শা সিদ্দিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত। হলে কিছু আসন সংকট রয়েছে। ৪৪ ব্যাচের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে ৪৮ ব্যাচ। কিন্তু ৪৪ ব্যাচের মাস্টার্স এখনো শেষ হয়নি। ফলে তারা হল ছাড়তে পারছেন না। এজন্য আসন সংকটে পড়তে হচ্ছে। আমরা হলের নামাজ রুম, টিভি রুম ও রিডিং রুম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি। তবে যেহেতু অনলাইনে ক্লাস চালু থাকবে সেজন্য আশা করছি সব শিক্ষার্থী হলে আসবেন না। তবে বাস্তবতা কী হয় সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল গণরুম রাখা হবে না। আমরা সে সিদ্ধান্তকে সাধুবাদও জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখন শুনতে পাচ্ছি উল্টো কথা। এত সময় পেয়েও গোঁড়ায় গলদ ঘটানোটা বড্ড বেমানান। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় রেখে গণরুম না রাখার বিষয়টি নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারত প্রশাসন। অথচ এখন গণরুমে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মানার উদ্ভট আলাপও তুলে আনছে তারা।’

আলকামা/এমএইচএস