২০১৮ সালের ২২ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭তম বর্ষপূর্তি উদযাপন ও সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আসেন মাহামন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার হাতেই সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করা হয় হাওর ও চর ইনস্টিটিউট। এরপর কেটে গেছে ৩ বছর ৪ মাস। কিন্তু ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত কাজ এখনও আটকে আছে কেবল নাম ফলকেই, তৈরি হয়নি কোনো ভবন।

জানা গেছে, জনবল নিয়োগ এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান কোনোটিই এখনও শুরু হয়নি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায়। তবে ইনস্টিটিউটের নামে কেনা হয়েছে সুদৃশ্য মাইক্রোবাস। যদিও মাইক্রোবাসটি ইউজিসির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, হাওর ও চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছায় ইনস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভিত্তিপ্রস্তর ফলকেই আটকে আছে অবকাঠামো। এ পর্যন্ত তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান পরিচালক গত বছর জুলাই মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শুধু তাই নয়, ইনস্টিটিউটটির প্রথম প্রস্তাবনায় বাজেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন প্রস্তাবনায় বাজেট এক হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এখনও পাস হয়নি বাজেট।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাওর ভূমিপুত্র খ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলা নিয়ে হাওর এলাকা গঠিত। এছাড়া বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ চর। আর এসব হাওর ও চরে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে কাটে মানুষের জীবন। এসব অঞ্চলের মানুষের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে জীবনমান উন্নত করার প্রয়াসেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স সংলগ্ন জায়গায় ইনস্টিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।

হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, নতুন প্রস্তাবনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলকেন্দ্র রেখে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াতে ছয়টি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবনার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ইউজিসি ছয়টি উপকেন্দ্রের জায়গায় চারটি উপকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবনা দিয়ে কিছু সংশোধনী দেয়। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেই সংশোধনীও আর পাঠানো সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি পেলে সংশোধিত বাজেটটি প্রথমে একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে। সংশোধিত বাজেট আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে ইউজিসির কাছে পাঠানো সম্ভব হবে। নতুন সংশোধনী ইউজিসি কর্তৃক গৃহীত হলে বাজেট পাস করানো সম্ভব হবে। বাজেট পাস হলে অবকাঠামোগত কাজ শুরু করতে পারবেন বলে জানান তিনি। সঙ্গে ইনস্টিটিউটটির জন্য উপকেন্দ্রসহ জায়গা নির্ধারণ ও নির্ধারিত জায়গা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটা বাজেট চাওয়া হবে।

জনবল নিয়োগ ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বাজেটের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে জনবল নিয়োগের একটা খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই ইনস্টিটিউটের অধীনে ‘ওয়েট ল্যান্ড রিসোর্চসেস অ্যান্ড সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার’ নামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে। আগের পরিচালকের সময়ে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। খুব শিগগিরই নতুন করে আবারও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এ বছরের অক্টোবর-মার্চ সেমিস্টার থেকে শুরু করার জন্য চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা ডিগ্রিটির পাঠ্যক্রমের (কারিকুলাম) খসড়া প্রস্তুত করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সেটি পাস করিয়ে সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করে চূড়ান্ত করা হবে।

এসপি