এজিএসএস সদস্যরা

‘বাঁচলে কৃষক, বাঁচবে দেশ’— মূলমন্ত্র সামনে রেখে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ শোয়াইবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন কৃষিভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন এগ্রি-সায়েন্স সোসাইটি (এজিএসএস)। 

কৃষির আধুনিকায়ন, কৃষি তথ্যজ্ঞান সম্প্রসারণ এবং কৃষক ও কৃষি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে  সংগঠনটি। শোয়াইব তার অনবদ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে ‘অশোকা ইয়ং চেঞ্জমেকার’ নির্বাচিত হন। কৃষির আধুনিকায়ন এবং এজিএসএসের বর্তমান-ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন শোয়াইব। 

ঢাকা পোস্ট : এজিএসএসের শুরুটা কীভাবে?

শোয়াইব : আমার বেড়ে ওঠা গ্রামে। কৃষির সঙ্গে ভালোবাসা বলতে গেলে সেখান থেকেই শুরু। কৃষি সেক্টরের সমস্যাগুলো আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। বাংলাদেশে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষকরা আধুনিক চাষাবাদ নিয়ে খুব বেশি জানেন না। তাছাড়া প্রয়োজনের সময় তারা যথেষ্ট সহায়তাও পায় না। 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর কৃষি নিয়ে কিছু করার প্রবল ইচ্ছে জাগে। কৃষক ও কৃষি শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেই এগ্রি-সায়েন্স সোসাইটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সোসাইটির মূল টিমে ৪৫ জন কাজ করছেন। সঙ্গে ৯ জন উপদেষ্টা রয়েছেন।  এজিএসে শতাধিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন।   

 শেখ শোয়াইবুর রহমান

ঢাকা পোস্ট : এজিএসএস কীভাবে কাজ করছে? 

শোয়াইব : বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক প্রোগ্রাম, ইনোভেশনের মাধ্যমে এজিএসএস কাজ করে যাচ্ছে।  ‘ক্রপ অ্যাডভাইজরশিপ’ নামে  একটি প্রোগ্রাম রয়েছে,যার মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়। সোসাইটির এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কৃষকরা তাদের ফসল-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পান।

চলতি বছরের এপ্রিলে এজিএসএস ‘ফার্মার এইড’ নামে ডিজিটাল একটি সেবা চালু করেছে। এ সেবার আওতায় যে কেউ কৃষি সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন। আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে থাকে।

কৃষি শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা ২০২০ সালে ‘কৃষি ডিকশনারি’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করি, যাতে ছয় হাজার ২০০ এর বেশি কৃষি সম্পর্কিত শব্দ ও সংজ্ঞা সন্নিবেশিত হয়েছে। অ্যাপটি ইতোমধ্যেই গুগল প্লে স্টোর থেকে ১০ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। কোভিড-১৯ সময়ে কৃষি জ্ঞানের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আমরা শতাধিক আর্টিকেল প্রকাশ এবং পাঁচটি ওয়েবিনার ও কোর্সের আয়োজন করি। 

এছাড়া,  প্রতি বছর আমরা কৃষিভিত্তিক ‘এগ্রিকালচার ভার্চ্যুয়াল সামিট’ নামে একটি বিশেষ প্রোগ্রামের আয়োজন করে থাকি। যেখানে কৃষকরা জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি কৃষি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পান। সব মিলিয়ে আমরা কৃষকের সমস্যা সমাধান ও কৃষির আধুনিকায়ন কাজ করছি। 

ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে এজিএসএসের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন?

শোয়াইব : বাংলাদেশের কৃষকরা এখনো নতুন টেকনোলজি গ্রহণে প্রস্তুত নয়—এটি আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল কারণ, তারা স্মার্ট টেকনোলজিতে পারদর্শী নন। যদি তাদের এসব বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়,  তবে আমরা যে মিশনকে সামনে রেখে কাজ করছি, তা অর্জন করা সম্ভব হবে।  এজন্য কৃষিভিত্তিক বড় বড় সংগঠন ও সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

কৃষকের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে এজিএসএস

ঢাকা পোস্ট : ‘স্মার্ট ফার্মিং’ নিয়ে এজিএসএস কী  ভাবছে?

শোয়াইব : ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ১০ বিলিয়ন ছাড়াবে। এর অর্থ হলো আমাদেরকে এখন থেকে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। যেখানে আবাদী জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে, সেখানে এটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, আর এর একমাত্র সমাধান হতে পারে কৃষিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার। আমরা চেষ্টা করছি ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংকস’ এর মতো প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে কৃষির আধুনিকায়নে ভূমিকা রাখতে। আশা করছি শিগগিরই তা করতে পারব।

ঢাকা পোস্ট : এজিএসএস নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

শোয়াইব : বর্তমানে আমরা দুটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কৃষিবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘ফার্মশালা’  শিগগিরই প্রকাশিত হবে।  কৃষকদের জন্য আমরা নতুন একটি স্মার্ট অ্যাপ ‘এগ্রি-প্রো’ ডিজাইন করছি, যেটির মাধ্যমে কৃষক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফসলের রোগ শনাক্ত করতে পারবেন।

ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে ফুড সাপ্লাই চেইন নিয়ে কাজ করার। এই সেক্টরে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।  খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের উপযুক্ত দাম নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে চাই।

ঢাকা পোস্ট : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শোয়াইব : ঢাকা পোস্টকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আরএইচ