ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যা উল্লেখ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছেন তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামীম বানুসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং এলমার সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, আমাদের ছাত্রী, আমাদের মেয়ে এলমার এ মৃত্যু স্বাভাবিক হতে পারে না, স্বাভাবিক হলে শরীরে এত দাগ হবে কেন। হাসপাতালে যাওয়ার পর তার এই দৃশ্যটা দেখে আমি মানতে পারছি না। তার স্বামীকে দেখেও মনে হয়েছে অস্বাভাবিক এবং কথা বার্তা খুবই অসংলগ্ন। আমার বিভাগের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার দাবি করছি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তার কত সুন্দর স্বপ্ন, সুন্দর ভবিষ্যত ছিল। একটা ভুল সিদ্ধান্ত তাকে জীবন দিয়ে দিতে হলো। এ ঘটনার বিচার হলেও তার জীবন তো আর ফিরবে না। তোমরা জীবনের সিদ্ধান্ত ভেবে-চিন্তে নিও। ও নিজের প্রাণ দিয়ে তোমাদের একটা শিক্ষা দিয়ে গেল।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন এলমার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এলমার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি শুধু মর্মান্তিক নয় নৃশংসও বটে। আমরা এর দ্রুত বিচার দাবি করছি। কেননা, আমাদের দেশে বিচার প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হয়। এলমার স্বামী প্রভাবশালী বলে আমরা জেনেছি। অনেকসময় প্রভাবশালী হওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হয় না। তবে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন, এ প্রত্যাশা রাখি।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, এটি স্পষ্ট একটি হত্যা। এলমার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন, তাকে মানসিক ভাবেও নির্যাতন করা হয়েছে। এটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা একটি সুস্থ এবং দ্রুত তদন্তের দাবি রাখি। এই হত্যাকারীরা সমাজের দুর্বৃত্ত, এরা সাধু সাজার চেষ্টা করে। এ ধরনের অপমৃত্যু বন্ধ হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলমার পরিবারের পাশে আছে।

এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া।

এলমার সহপাঠী আরিফুল ইসলাম বলেন, এলমা খুবই বন্ধুসুলভ ছিল। রক্ষণশীল এক প্রবাসী ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুকে পরিচিত হয়ে ঘরোয়াভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা দেখতে পাই সে তার স্বাভাবিক জীবন থেকে কেমন দূরে সরে যায়। আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে তার স্বামী তাকে বাধা দিত। সে ঘর হতে বের হতে পারতো না। বাইরে বের হলেও তার সঙ্গে একজন গার্ড দিয়ে রাখতো এবং সে কোথায় কী করছে সব কিছু তার স্বামী ভিডিও কলের মাধ্যমে সবকিছু তদারকি করতো।

গতকাল (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান এলমা। তার শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। পরিবার ও সহপাঠীরা এটিকে হত্যা দাবি করলেও এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এইচআর/এসএম