সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন

সম্প্রতি মারা যাওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী এলমা চৌধুরী মেঘলা নৃত্যকলা বিভাগে পড়ে দোষ করেছিলেন কি না— এমন প্রশ্ন রেখেছেন তার মা শিল্পী চৌধুরী। 

এলমা হত্যার বিচার চেয়ে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। মানবন্ধনে তার বাবা ও সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। 

শিল্পী চৌধুরী বলেন, নৃত্যকলায় পড়া নিয়ে আমার মেয়েকে সে (এলমার স্বামী) এত অত্যাচার করছে! আমাকে বলেছিল, তাকে নৃত্যকলায় পড়তে হবে না, তাকে বিদেশে নিয়ে যাব, সেখানে অন্য বিষয়ে অনার্স করবে। আমি বলেছিলাম এত কষ্ট করে তাকে এতদূর নিয়ে এসেছি, সে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্সটা করুক, তারপর নিয়ে যেও।

তিনি বলেন, এলমা কি নৃত্যকলা বিভাগে পড়ে দোষ করেছে? এটা পড়াশোনা নয়? এর কি কোনো বিচার নেই, পড়াশোনা কি মানুষ করবে না? সবই তো পড়াশোনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করুন, বিচার করুন।

মানববন্ধনে এলমার সহপাঠী হাবিবুর রহমান বলেন, একটি প্রগতিশীল ও মুক্তমনা ডিপার্টমেন্টে পড়েছে বলে এলমার চুল কেটে দেওয়া হয়। এলমাকে ধর্মীয় গোঁড়ামির বৃত্তে আবদ্ধ করে রাখা হয়। শুধু নৃত্যকলা বিভাগে পড়েছে বলে তাকে পরকীয়ায় আসক্ত বলে অপবাদ দেওয়া হয়। শুধুমাত্র নৃত্যকলা বিভাগে পড়েছে বলে আমার বন্ধু এলমাকে কঠোর নজরদারিতে রেখে ক্যাম্পাসে চলতে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একমাত্র নৃত্যকলা বিভাগের কারণে আমার বান্ধবী এলমাকে পরকালে চলে যেতে হয়েছে। আমি আমার শিক্ষদের উদ্দেশে বলব, আপনারা যদি এখনই এই প্রতিবাদ না করেন, নিজেদের জায়গা থেকে বিভাগটিকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারেন, তাহলে আমরা নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি।

আরেক সহপাঠী নুসরাত জাহান তিথি বলেন, নৃত্যকলায় পড়ার কারণে তার চুল কেটে দেওয়া হয়েছে, তাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। সবসময় ল্যাপটপে ভিডিওকলে পর্যবেক্ষণে রাখা হতো। ডিপার্টমেন্টে আসতে দিত না। সে নাচ করতো বলে তার পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সে একটা সময় বাসা থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু তাকে বের হতে দেওয়া হয়নি, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ নির্মম ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

১৪ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এলমা। তার শরীরে আঘাতের অনেক চিহ্ন দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। পরিবার ও সহপাঠীরা এটিকে হত্যা দাবি করলেও এলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষের দাবি তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

১৫ ডিসেম্বর অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এলমা চৌধুরীর মৃত্যুকে অস্বাভাবিক ও হত্যা দাবি করে বিচার দাবি করেন তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

এইচআর