শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দিনভর প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

সোমবার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৃথকভাবে প্রগতিশীল ছাত্রজোট, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি ছাত্রদল (একাংশ), বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) নেতাকর্মী এবং ঢাকায় অবস্থানরত শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেন।

এ সময় তারা শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন। উপাচার্যের কুশপুতুল জ্বালিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।

হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা। দুপুরে একই দাবি জানায় প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

ঢাকায় অবস্থানরত শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয় সন্ধ্যায়। তারা বলেন, আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা পুলিশের কাছে ফুল নিয়ে গিয়েছিল, অথচ পুলিশ তার জবাব দেয় গুলি করে। ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হয়েছি। আমরা এ স্বৈরাচারী উপাচার্যের পদত্যাগ চাই। এটি বর্তমান-সাবেক সব শিক্ষার্থীর দাবি। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

দুপুরে এক সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি জানাবেন। প্রশাসন তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। অথচ শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা করেছে৷ পুলিশ ডেকে যেভাবে বেপরোয়াভাবে লাঠিচার্জ করা হয়েছে৷ এটি অত্যন্ত লজ্জার। অবিলম্বে এর বিচার দাবি করছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, একসময় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের রক্ত বিলিয়ে দিতেন। আজ তারা নিজেরাই নিজেদের অবরুদ্ধের জন্য দায়ী৷ যে উপাচার্য নিরাপত্তা দিতে পারেন না, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে পারেন না, অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছি৷ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ন্যক্কারজনক হামলার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকেও নিতে হবে।

সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, সাস্টের শিক্ষার্থীদের চলমান যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা একমত পোষণ করছি। অনতিবিলম্বে আমরা ভিসির পদত্যাগ এবং প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। এর জেরে রোববার উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে উপাচার্যকে মুক্ত করে। রাতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করেন এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলেন।

এইচআর/আরএইচ