উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ শিক্ষার্থী। অনশনে বসার ৩২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অনশন ভাঙেননি তারা। এদিকে অসুস্থ হয়ে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত ৭ শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল থেকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট ৭ শিক্ষার্থীকে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জানা যায়, এর মধ্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫, জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে একজস ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে একজন ভর্তি হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সও। কিছুক্ষণ পর পর থেমে থেমে বাজছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। একজন একজন করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। অনশনরতদের মধ্যে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে ৭ জন হাসপাতালে ও ১২ শিক্ষার্থীকে আন্দোলনস্থলেই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

অনশনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব। এতে মৃত্যুও হলেও আমরা এ স্থান থেকে সরব না।

অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মেডিকেল টিমের সদস্য মো. নাজমুল হাসান বলেন, এখানে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা ক্রমশই খারাপের দিকে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। সংখ্যা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছি। তারা ৩০ ঘণ্টার ওপর কেউ কিছু খায়নি। অনশনরত সবাই পানি স্বল্পতায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, যাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাদের জন্য স্যালাইনসহ ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানেই স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদি কোনো জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে তাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজে বেডের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম এসে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করছেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে মশাল মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময়ে বেধে দিয়েছিলেন। দাবি না মানলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এদিকে গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের ঘটনায় দুই থেকে ৩০০ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে- আন্দোলনরত ২-৩শ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রীহলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’ 

পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন তারা। এরইমধ্যে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।  এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

জুবায়েদুল হক রবিন/ওএফ