ড. ফারুক হোসাইনের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ফারুক হোসাইন স্মরণে আয়োজিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেছেন, ফারুক হোসাইন ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। একজন বিষণ্ণ ব্যক্তিরও মন ভাল হয়ে যেতো তার কাছে এলে। অসম্ভব জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিল তার জীবনযাপন। মানুষকে আপন করে নেওয়ার দুর্লভ গুনের অধিকারী ছিলেন তিনি। তার অকাল মৃত্যুতে দেশের উচ্চ শিক্ষার অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সমাজকর্ম বিভাগের উদ্যোগে ভার্চুয়ালি এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. রাজিনা সুলতানা সভায় সভাপতিত্ব করেন
বিজ্ঞাপন
সভায় বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম আজম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কেএম রবিউল করীম, সমাজতাত্ত্বিক ও গবেষক প্রফেসর ড. এএসএম আতিকুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর সমাজবিজ্ঞানী ড. রেজাউল করীম, প্রফেসর ড. সৈয়দা আফরিনা মামুন, প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোস্তফা হাসান, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, প্রফেসর ড. আখতার হোসেন মজুমদার, প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান, মরহুম ফারুক হোসাইনের বড় ভাই সিনিয়র সাংবাদিক হারুন জামিল, সহকর্মী আনোয়ার হোসেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে খালিদ ফেরদৌস, মাহমুদ মোস্তফা, স্বপ্না আক্তার প্রমুখ।
ঢাকা, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ স্মরণসভায় অনলাইনে অংশ নেন।
বিজ্ঞাপন
প্রফেসর ড. গোলাম আজম বলেন, মরহুম ফারুক হোসাইন একজন আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। তার মানবিকগুনাবলী ছিল ঈর্ষণীয়। মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবিত ছিলেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ছিল তার। শারীরিকভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার কর্মের কোন মৃত্যু নেই। কর্মের মাধ্যমে তিনি বহুকাল বেঁচে থাকবেন।
প্রফেসর ড. কেএম রবিউল করীম বলেন, ফারুক হোসাইনের আকস্মিক মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন সমাজকর্ম বিভাগের সম্পদ। কর্মজীবনে তার সঙ্গে বহু স্মৃতি রয়েছে। কিন্তু তিক্ততার কোন স্মৃতি নেই। সবাইকে আপন করে নেয়ার বিশেষ গুন ছিল তার। মানুষের মন ভাল করার দুর্লভ এক গুনের অধিকারী ছিলেন তিনি।
প্রফেসর ড. এএসএম আতিকুর রহমান বলেন, ফারুক ছিল আমার খুবই প্রিয় ছাত্রদের একজন। সততা, মানুষের জন্য দরদ, উত্তম ব্যবহার এসব গুনে গুণান্বিত ছিলেন তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকশিত হয়েছেন তিনি। আমার সন্তানের মতো ছিল সে। জীবদ্দশায় এমন আর কাউকে মৃত্যুর দৃশ্য যেন না দেখতে হয় সেটাই কামনা করি।
ড. মোস্তফা হাসান বলেন, একাডেমিক দিক থেকে ড. ফারুক ছিলেন অত্যন্ত সরব একজন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়।
প্রফেসর ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, তার কথা শুনলেই হৃদয় ঠাণ্ডা হয়ে যেতো। এমন দরদমাখা কণ্ঠে আর কারো কথা শুনতে পাবো না। এমন হাসিখুশি, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ আমি আর দেখিনি। বাংলা ইংরেজি আরবি ভাষায় তার দখল ছিল। এমন শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক আমি আর দেখিনি।
ড. ফারুকের দীর্ঘ জীবনের সহপাঠী প্রফেসর আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, সমাজের বহু বখে যাওয়া ছেলেরা তার কাছে এসে নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে তিনি মনে করতেন আমানত। মন খুলে প্রাণ খুলে তাই তাদের সঙ্গে মিশতেন।
আলোচনাকালে প্রফেসর ফারুকের শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের তরুণ অধ্যাপক ড. ফারুক হোসাইন ২৭ ডিসেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে মারা যান।
আইএসএইচ