রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেছেন, শাবিতে হল প্রভোস্টের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ ছিল। তাদের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদেরকে পেটাল। উপাচার্যের ইন্ধনে পুলিশও পেটাল। এখন সরকার আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ খুঁজছে। তাহলে তৃতীয় পক্ষ কি পুলিশ-ছাত্রলীগ?

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ ও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির সমর্থনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক নকীব এসব কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন, তারা ছাত্রদের ওপর আঘাত না করলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ না খুঁজে শিক্ষার্থীদের বাঁচান। তারা জীবন বাজি রেখে অনশন করছে। যারা অন্যায় আচরণ করেছে, তারা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে অন্যায় আচরণ করার একটি শক্তি নতুন করে জেগে উঠবে। এটা শুধু শাবির ঘটনা নয়, এটি দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা।

অধ্যাপক নকীব বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা কি মানুষের মতো অধিকার নিয়ে বাঁচবে? তারা কি কথা বলতে পারবে?তারা কি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করতে পারবে? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আজকের চলমান ঘটনার ফয়সালার ওপর নির্ভর করছে।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, আমাদের লজ্জা লাগে, আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পার করেছি। এমন সময়ে এসেও শিক্ষার্থীরা শোষিত, লাঞ্ছিত এবং হামলার শিকার হচ্ছে। শাবিপ্রবিতে অহিংস ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানো হলো, মারপিট করা হলো। ছাত্ররা সেখানে গিয়েছিল প্রভোস্টকে পদত্যাগ করানোর জন্য। কিন্তু সেটি এখন উপাচার্যের পদত্যাগ আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে। কেন এই আন্দোলনে রূপান্তরিত হলো সেই প্রশ্নটি জানা খুবই দরকার।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা ১৪০ ঘণ্টা ধরে আমরণ অনশন করছে। যে কোনো  মুহূর্তে একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমরা সেই বিষয়গুলো খেয়াল করছি না। আমরা শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য আন্দোলনের মধ্যে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছি, তৃতীয় পক্ষ খুঁজছি। আমাদের ৩০ জন শিক্ষার্থী সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী উপাচার্যের বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না থাকলে শিক্ষকের কোনো মূল্য থাকে না। শুধু উপাচার্যের পদত্যাগেই এটার সমাধান হবে কিনা জানি না। কিন্তু এটার সমাধান করা জরুরি। 

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শাবি উপাচার্যের পদত্যাগই এই আন্দোলন থামানোর একটা পথ।  এছাড়া এই আন্দোলন থামানো যাবে না। এটা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এটা সরকারের ও প্রশাসনের ব্যর্থতা। শিক্ষার্থীদের অনশনের ১৪০ ঘণ্টা পার হলেও শিক্ষার্থীদের খোঁজ না নিয়ে তৃতীয় পক্ষকে খোঁজা হচ্ছে- কে ইন্ধন দিচ্ছে, কোথা থেকে টাকা আসছে সেটার একটা ফানি গেইম খোঁজার চেষ্টা করছে সরকার।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা বলেন , গণতন্ত্র চর্চার জায়গা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাদেশে উপাচার্য নির্বাচনের কথা বলা আছে। কিন্তু গত ৩০ বছর ধরে এই অধ্যাদেশ মতো নিয়োগ চলে না। অনির্বাচিত উপাচার্য ও প্রশাসকের কাজ গ্ৰুপ তৈরি করা। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উপাচার্য নির্বাচন চাই। শাবির ঘটনা এক দিনের বিস্ফোরণ নয়, ফুঁসে থাকা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তাই গণতান্ত্রিক উপাচার্য প্রয়োজন। 

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন রাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র অধিকার পরিষদের আমান উল্লাহ আমান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রঞ্জু হাসান প্রমুখ।

মেশকাত মিশু/আরএআর