ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, স্নাতকে ৪.০০ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৭১ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম হলেও সৈয়দা আছিয়া আশা নামে এক প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেনি ভাইভা বোর্ড।

এদিকে শিক্ষক পদে সুপারিশ পাওয়া আমিনুল ইসলাম স্নাতকে ৩.৬৭ পেয়ে প্রথম এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৮১ সিজিপিএ পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে সৈয়দা আছিয়া আশাই সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন। স্নাতকে সিজিপিএ ৪ পাওয়ার পাশাপাশি স্নাতকোত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম এবং এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন।

অন্যদিকে আমিনুল ইসলাম স্নাতকোত্তরে স্কুল সাইকোলজি থেকে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। যেখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইডেন, বদরুন্নেসা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী।

সৈয়দা আছিয়া মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তাদের ধারণা, বিভাগ থেকে যে দুজন শিক্ষক ভাইভা বোর্ডে ছিলেন তারা উভয়ই স্কুল সাইকোলজির শিক্ষক। আর সৈয়দা আছিয়া আশা ছিলেন সাইকোলজির মূল মাস্টার্স প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী। সেখানে হয়তো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সৈয়দা আছিয়া আশার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, সেটা এই বয়সে অনেক শিক্ষকেরও ছিল না। ক্লাসে তার প্রেজেন্টেশনও ছিল সবার চেয়ে আলাদা। এছাড়া তার ফলাফলও মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে ভালো। নিয়োগ বোর্ড তাকে সুপারিশ না দেওয়ায় আমরা হতাশ।

বিভাগের আরেকজন শিক্ষক বলেন, আশা অনার্সে সিজিপিএ ৪ পেয়ে প্রথম হয়েছেন, যেখানে মনোনীত প্রার্থীর সিজিপিএ ৩.৬৭। এছাড়া মাস্টার্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন, সেখানে মনোনীত প্রার্থী বিভিন্ন কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন। এখানে অবশ্যই কোনো কিন্তু রয়েছে। না হলে এত ভালো ব্যাকগ্রাউন্ডের একজনকে মনোনয়ন না দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

ভাইভা বোর্ডে থাকা মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মহোদয় ভালো বলতে পারবেন। তবে এখানে পক্ষপাতমূলক কিছু করা হয়নি।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম মাহবুব হাসান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা একাডেমিক ফলাফল, ভাইভা পারফরম্যান্স সবকিছু বিবেচনা করি। ফলাফলের কাছাকাছি ফলাফল, আকাশ-পাতাল ব্যবধান এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয় না। আমরা মাস্টার্সের চেয়ে অনার্সের ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দিই। ফলাফল বিবেচনার পাশাপাশি ইন্টারভিউ বিবেচনা, লেখালেখি, সিলেকশন বোর্ডে প্রেজেন্টেশন এবং শ্রেণিকক্ষে কেমন প্রেজেন্টেশন দিতে পারবে এসব কিছু বিবেচনা করে একজন শিক্ষক নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ভাইভা বোর্ডে যারা আছি তারা সব কিছু বিবেচনা করে বুঝব পরীক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে কেমন ডেলিভারি দিতে পারবেন। বাইরে থেকে বিভিন্নজন বিভিন্নজনের জন্য তদবির করে। তবে আমরা যোগ্য ক্যান্ডিডেটকে মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, সিন্ডিকেটে যাবে তারপর পাস হবে।

এইচআর/ওএফ