বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) স্নাতকোত্তর পড়ুয়া জাহিদের দুইটি কিডনিই বিকল হওয়ায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিডনি দিলেন মা বুলি বেগম। মায়ের কিডনিতে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন জাহিদ হাসান। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে মা ও বোনের স্বপ্ন পুরণ করবেন জাহিদ। ইতোমধ্যে মা-ছেলে ঢাকা থেকে চিকিৎসা শেষে পঞ্চগড়ের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বাড়িতে ফিরলে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহিদ। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ধরা পড়ে দুটি কিডনি বিকল। রংপুর মেডিকেলে কিছুদিন থাকার পর ৩ নভেম্বর ঢাকার শ্যামলীতে সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে (সিকেডি) ভর্তি করানো হয়। পরে গত ২২ জানুয়ারি রাতে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সাত দিনের মাথায় বুলি বেগম হাসপাতাল ছাড়লেও জাহিদ ছেড়েছেন ১০ দিনের মাথায়।

কিডনি দানের পর জাহিদের মা বুলি বেগম বলেন, কিডনি দিতে এত কষ্ট তা জানতাম না। তবে এ কষ্টের কথা আগে জানলেও আমি ছেলেকে কিডনি দিতাম। আমার কাছে ছেলের জীবনই আগে। আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম, আমার দুইটি কিডনি যদি দেওয়া লাগে নেন, তবুও আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে দেন।

জাহিদের বড় বোন নূর নাহার বলেন, হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর জাহিদের সঙ্গে যখন মায়ের প্রথম দেখা হয়, তখন মায়ের চেহারা দেখে মনে হলো তিনি প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। জাহিদও হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বার বার জানতে চাচ্ছিল মা ভালো আছেন কি না।

তিনি আরও বলেন, সিকেডি হাসপাতালের প্যাকেজে মা ও ছেলের অস্ত্রোপচার, ১১ দিন হাসপাতালে থাকা বাবদ খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে বিভিন্ন পরীক্ষা ও ওষুধ বাবদ এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। এসব টাকা জোগাড়ের জন্য বসত ভিটার ১০ শতাংশ জমি অল্প মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখন প্রতি মাসে জাহিদের শুধু ওষুধের পেছনে খরচ হবে ৩০ হাজার টাকা। এখনো জাহিদ ও মায়ের খাওয়া-দাওয়াসহ বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে। তবে এ মুহূর্তে তাদের হাতে যে টাকা আছে, তা দিয়ে কয়েক মাস চালাতে পারব।

এদিকে জাহিদের অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর যারা জাহিদ ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাহিদের বোন নূর নাহার।

শিপন তালুকদার/আরআই