দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আকবর হোসাইন খান রাব্বি হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

বর্তমানে মামলাটি চট্টগ্রামের খুলশী পুলিশ তদন্ত করছে। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পরিবারের দাবি, মামলাটি যেন পিবিআই বা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তারপরও কোনো অগ্রগতি নেই।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আকবরের বড় বোন লাবণী খানম আঁখি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ২৭ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আকবর হুসাইন খান রাব্বি পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময় ফোনে যোগাযোগ করলে আশেপাশে রয়েছেন বলে জানান। সর্বশেষ রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে যখন আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তখন একটু পর বাসায় ফিরবে বলে তার বড় বোনকে জানান। এরপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটে জানা যায় আকবরকে চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে নিচে কে বা কারা ফেলেছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন। এ সময় তার কোমরের বাঁ পাশে ভোতা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ক্ষত ছিল। ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেওয়ায় তার মস্তিষ্ক অনেকাংশে থেঁতলে যায়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে টানা ৫দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থেকে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে মারা যায় সে।

তিনি বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, পুলিশ এখনো সন্তোষজনক কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। কে বা কারা, গত ২৭ আগস্ট রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা হতে চট্টগ্রাম এনে তাকে হত্যা করেছে, তা এখনও রহস্য রয়ে গেছে। আকবরের মোবাইল ফোনটি ঘটনার এক দুইদিনের মধ্যেই থানা থেকে লক খুলতে গিয়ে রিসেট দেওয়া হয়, ফলে তার ফোন থেকে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব। তারা সকলেই শঙ্কা প্রকাশ করে, তদন্তে এত দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এর অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য তারা বাংলাদেশ পুলিশের গাফিলতিকে প্রধান কারণ মনে করছেন। 

তারা আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনেক মেধা, শ্রম দিয়ে এ পর্যায়ে আসে। আকবরের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি হওয়ার, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন। ঠিক ফাইনাল পরীক্ষার আগে তার এ রহস্যজনক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার ও সহপাঠীরা। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মফিজ বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, তার ল্যাপটপ সিআইডির ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে রিপোর্ট পেলে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে।

এমটি/এসকেডি