ডানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান, বাঁয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী রোকনুজ্জামান রোকন

গেস্টরুম নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল প্রশাসন। মাস না পেরোতেই এবার গেস্টরুম নির্যাতনের অভিযোগ উঠল স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন তাকে  মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে হলের ১০৮ কক্ষে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন।

জানা গেছে, অভিযুক্ত রোকনুজ্জামান রোকন হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম শাহরিয়ার মুনের অনুসারী। মুন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তৈমুর। নির্যাতনের ফলে কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাননি বলে দাবি তার। বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তৈমুর।  

তৈমুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বাঁধনে কাজ করি। বাঁধনের এক বড় ভাই আমাকে রক্তের গ্রুপ জানতে হলের মাঠে ডাকেন। পরে রাতে গেস্টরুমে গেলে রোকন ভাই জানতে চান, কেন আমি হলের  মাঠে গিয়েছিলাম এবং বাঁধনের সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কারণ ব্যাখ্যা করলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং কলার ধরে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারেন। আমি কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাইনি, এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়ি।

তিনি বলেন, সিনিয়র ভাইয়েরা এসে আমাকে এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যেতে বলেন। এমনকি বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানালে তিনি (রোকন) আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং হল থেকে বের করে দেবেন বলে জানায়। আমি ভয় পেয়ে এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হল ছেড়ে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিই। ভীষণভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, প্রভোস্ট স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোকন ভাই খুবই অ্যাগ্রেসিভ। এর আগেও তিনি অনেক ছাত্রকে গেস্টরুমে মেরেছেন। নিজেকে মোস্ট পলিটিক্যাল প্রমাণের জন্য তিনি জুনিয়রদের প্রচুর গালিগালাজ ও মারধর করেন। এমনকি কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুকে তিনি মেরে কান ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেছিলেন।

তবে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি ঢাকা পোস্টের কাছে অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রোকন। তিনি বলেন, নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। গেস্টরুমে আসার পর তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কি কোনো ভাইকে চেনো? অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও সে উত্তর না দেওয়ায় তাকে বলেছিলাম, তুমি কি বেয়াদব? এতটুকুই, এর বাইরে কোনো কিছু হয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে হল প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম শাহরিয়ার মুন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য হলে সে যেই হোক না কেন, আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা হল প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করব। তৈমুরের ওপর দ্বিতীয় কোনো আঘাত না আসার দায়িত্ব আমি নিলাম। আমার কোনো কর্মী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার শাস্তি নিশ্চিত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন হলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে একাধিকবার কল করা হয় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খানের ফোনে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। 

এইচআর/আরএইচ