ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি জসীম উদ্দীন হলের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দুই দফায় হল ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ালিউল সুমন ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমানের গ্রুপের মধ্যে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে ইসমাইল হোসেন নামে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের রাশেদুজ্জামান রনির ঠাট্টার জেরে ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটে। ইসমাইল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমানের অনুসারী, অন্যদিকে রনি হল ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের অনুসারী।

ভুল বুঝাবুঝির জের ধরে রাত ৮টার দিকে সভাপতির অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদকের ব্লকের ইসমাইল হোসেনের রুমে গিয়ে তাকে ধরে আনতে যায়। তা দেখে সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমানের অনুসারীরা তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের ধাওয়া করে। পরে রাত পৌনে ৯টার দিকে সভাপতি সুমন তার অনুসারীদের নিয়ে হলের চার তলায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে লুৎফরের অনুসারীরা দুই তলায় অবস্থান নেয়।

জানা গেছে, দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে এক পর্যায়ে হাতাহাতির পরিস্থিতি সৃষ্টি হলের আবাসিক শিক্ষকদের চেষ্টায় উত্তেজনা আংশিক কমে। শিক্ষকরা সভাপতি সুমন ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফরকে নিয়ে প্রভোস্টের অফিসে যান। ঘটনার খবর শুনে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদও হলে আসেন। প্রভোস্ট অফিসে দুই নেতাকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।

সূত্র জানায়, হলের নিচতলায় প্রভোস্টের আলোচনা চলাকালীন রাত ১০টার দিকে আবারো উত্তেজনা শুরু হয়। এ সময় রড, স্ট্যাম্প নিয়ে কর্মীরা বের হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও আবাসিক শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শিক্ষকরা এলে হলের মাঠে স্ট্যাম্প ফেলে দিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ালিউল সুমন বলেন, একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি কোনো বড় ঘটনা নয়। জুনিয়র ছেলেদের ম্যাচিউরিটি ঠিকভাবে হয়নি বলে তারা আওয়াজ করেছে। দুই-চার মিনিট বাকবিতণ্ডা হয়েছে, তবে মুখোমুখি নয়। ওরা ছিল দুই তলায় আর অন্যরা ছিল তিন, চার আর পাঁচ তলায়। এমনকি মারামারি না হওয়ার জন্য ওরা হলের করিডোরের লাইট বন্ধ করে রাখে। পরে আমরা দুইজন খবর পেলে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) সবাইকে যার যার রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আসি।

সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি। ভিসি চত্বরে যা হয়েছে তা সেখানেই শেষ হয়েছে। এখানে যারা চিল্লাচিল্লি করছে তারা মূলত নন পলিটিক্যাল ছাত্র। তারা বিষয়টি উপভোগ করছিল এবং বিনা কারণে তারা যার যার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়াজ করছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিষয়টা আমিও জেনেছি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। যেকোনো মূল্যে হলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে। ছাত্রলীগের কেউ যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকে আমরা কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, হলের সব শিক্ষার্থীই আমাদের সন্তানের মতো। ভাইদের মধ্যে ঝামেলা হয়, আবার মিলে যায়। এটাই স্বাভাবিক। এটা যাতে এমন না হয় যে, দীর্ঘদিন কারো সাথে সম্পর্ক খারাপ থাকে। এখনো পর্যন্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তবে ঘটনাটি আরও বড় হতে পারতো। সামনে এ ধরনের ঘটনা যাতে না হয় এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান থাকবে।

তিনি হলের দুই নেতাকে নিজেদের কর্মীদের নিয়ে সতর্ক ও শান্তিপূর্ণভাবে থাকার আহ্বান জানান এবং স্ট্যাম্পগুলো হল অফিসে জব্দ করার নির্দেশ দেন। 

এইচআর/এইচকে