স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও একটি সেতুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নীলফামারীর জলঢাকা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ। 

সরেজমিনে জানা যায়, জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা উপজেলা। আর এই উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও গোলমুন্ডা ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে বুড়ি তিস্তা নদী। নদীসংলগ্ন এলাকাগুলোতে ভাঙা-গড়ার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অনেক জনপদ। এসব জনপদের মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বর্ষা মৌসুমে নৌকায় করে নিকটস্থ জলঢাকা, নেকবক্ত বাজারে আনা নেওয়া করে। শুষ্ক মৌসুমে টোল দিয়ে বাঁশের সেতু দিয়ে মাথায় ও ঘাড়ে করে পারাপার হতে হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্বাধীনতার এত বছরেও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি। মনছেরের ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য মৌলিক অধিকার থেকে।

বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় কথা হয় ডাউয়াবাড়ি চরভরট এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই দুর্ভোগ। ভবিষ্যতে এই দুর্ভোগ দূর হবে বলে বিশ্বাস হয় না। ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান এমনকি এমপিও এসে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, কিন্তু বাস্তবায়ন আর হয় না। ফলে কেউ অসুস্থ হলে তাকে কাঁধে করে ৮-১০ কিলোমিটার হেঁটে নেকবক্ত বাজারে এসে অটো অথবা রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।

আলসিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় উপজেলা সদরে যেতে অনেক কষ্ট হয়। বন্যায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়ে যায় আরও বেশি। অথচ বুড়ি তিস্তা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলেই এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাব আমরা। 

ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্ষাকালে ২০-৩০ জন না হলে নৌকা ছাড়ে না। এতে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। আমাদের এলাকার কৃষকরা অনেক আবাদ করে কিন্তু রাস্তাঘাট বা যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পাইকাররা এই এলাকায় আসে না। ফলে সঠিক দামটা পাই না। 

নেকবক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তানজিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই দিক দিয়ে স্কুল যেতে খুব সমস্যা হয়। বর্ষাকালে নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোতে টাকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। অনেক সময় সময় মতো স্কুলে পৌঁছাতে পারি না। বর্ষাকালে অনেক সময় আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। আমি দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

ডাউয়াবাড়ি গ্রামের সলেমান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, হামার এইটে পাইকার আইসে না, যেইলা ফসল হামরা ফলাই কম দামে বেঁচে দেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি হামার এলাকার মানুষর কষ্টগুলো দেখি একটা ব্রিজ নির্মাণ করি দেউ, তাহলে অনেক উপকার হইবে হামার।

জানতে চাইলে ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মুকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না। আমার বাড়িতে আসছেন, চা খেয়ে চলে যান।

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে সেতুটি নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে ছয় মাস আগে বুয়েটের স্পেশালাইজড টিম ফিজিবিলিটি যাচাইয়ের জন্য এসেছিল। সেটা ঠিকঠাক থাকলে আর মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দেয় তাহলে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে। 

এসপি