প্রতিবন্ধী চা-দোকানিকে গরম পানিতে ঝলসে দিলেন কথিত আ.লীগ নেতা
লক্ষ্মীপুরে গরম পানি ছুড়ে মেরে আলমগীর হোসেন নামে শারীরিক প্রতিবন্ধী এক চা-দোকানির শরীর ঝলসে দিয়েছেন জহির আহমেদ রিপন ভূঁইয়া নামে কথিত এক আওয়ামী লীগ নেতা। দোকানের পাওনা টাকা চাওয়ায় রিপন ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চা-দোকানির শরীরে গরম পানির কেটলি ছুড়ে মারেন।
রোববার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের কাজিরদিঘীরপাড় বাজারে এ ঘটে। আহত আলমগীর রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সাইচা গ্রামের বাসিন্দা ও কাজিরদিঘীরপাড় বাজারের চা দোকানি। প্রায় ১৮ বছর তিনি বাজারটিতে চা বিক্রি করে আসছেন।
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত রিপন ভূঁইয়া সদর উপজেলার উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড হামছাদী গ্রামের একরাম উদ্দিন ভূঁইয়া বাড়ির তোফায়েল আহমেদ লেদু ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
চা দোকানি আলমগীর ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলমগীর বাস চালক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি বাম পা (পায়ের গোড়ালি) হারান। এরপর তিনি কাজিরদিঘীরপাড় বাজারে পান-সিগারেট বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ১৮ বছর হয়েছে তিনি চা দোকান দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে রিপন ভূঁইয়া প্রায়ই দোকানে এসে চা-সিগারেটসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে টাকা দেন না। টাকা চাইলে পরে দেবে বলে চলে যান। মাঝে মাঝে দলবল নিয়ে এসে খেয়ে চলে যান। এরপর থেকে আর তার বাকির হিসেব রাখা হয় না। আজ সন্ধ্যায় দোকানে এসে রিপন চা-সিগারেট নেন। চা-সিগারেট পান করা শেষে তিনি চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাকে ডেকে আলমগীর টাকা চান। কিন্তু রিপন টাকা দেবে না বলে জানান। এতে আলমগীর রিপনকে আর দোকানে না আসার জন্য বলেন।
বিজ্ঞাপন
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে গ্যাসের চুলার ওপর থাকা গরম পানিসহ চায়ের কেটলি আলমগীরের শরীরে ছুড়ে মারেন রিপন ভূঁইয়া। দ্বিতীয় কেটলি ছুড়ে মারার সময় আলমগীর তা হাত দিয়ে ধরে ফেলেন। এতে তার হাত, হাটু, পিঠ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
বক্তব্য জানতে রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার মোবাইলফোন নম্বর পাওয়া যায়নি।
রিপনের জেঠাত ভাই ও কাজিরদিঘীরপাড় বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। আলমগীরকে আমি হাসপাতালে দেখতে যাব।
উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, পাওনা টাকা চাইলে চা দোকানি আলমগীরের সঙ্গে রিপনের বাদানুবাদ হয়। আমি তখন রিপনকে বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি না শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে আলমগীরের শরীরে গরম পানির কেটলি ছুড়ে মারে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। রিপন নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তবে আওয়ামী লীগে তার কোনো পদ-পদবি নেই।
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদিন বলেন, গরম পানিতে আলমগীরের হাত, হাটু, পিঠ ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরআই