সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে প্রতিটি জায়গায় সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে রুখতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। জনগণের মাধ্যমে প্রত্যেকটি অঞ্চলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে ছড়িয়ে দিতে হবে। কোনো সংস্কৃতিকর্মী জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত নয়। সকল পেশার মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হবার প্রবণতা দেখা গেলেও সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে এটা নেই। এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত কাউকে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়নি।

বুধবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে পাঁচ দিনব্যাপি জাতীয় পিঠা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্টপোষকতায় রংপুরে প্রথমবারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ।

প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, রংপুরে আগামী বছর থেকে ভাওয়াইয়া উৎসব করা হবে। এখন থেকে প্রতিবছর যাতে ভাওয়াইয়া উৎসব হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। শুধু পিঠা উৎসব, ভাওয়াইয়া উৎসব নয়, আমরা সব ধরনের লোকজ ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের সবার চাওয়া প্রতিবছর এ ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হোক। এ জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পাশে থাকবে।

বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে উদ্বোধক হিসেবে জাতীয় পিঠা উৎসব পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যজন খন্দকার ম. হামিদ বলেন, দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় পনেরো বছর ধরে আমরা এ ধরনের উৎসব করে আসছি। কয়েক বছর ধরে ঢাকার বাইরেও জাতীয় পিঠা উৎসব করা হচ্ছে। রংপুরের আগে আরও ছয়টি বিভাগে উৎসব করা হয়েছে। আমরা চাই পিঠা শিল্পকে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে। যারা পিঠা বুনে তারা শিল্পী, আমাদের প্রত্যেকটি মা-বোনের মধ্যে এই শিল্প রয়েছে।  

উৎসবে রংপুর বিভাগীয় আহ্বায়ক বিপ্লব প্রসাদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম, রংপুর বিভাগীয় সদস্য সচিব আশরাফুল আলম আল-আমিন প্রমুখ।

আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, পিঠার সাথে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। গ্রামীণ সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হলে নতুন প্রজন্মের কাছে পিঠা তৈরির গল্প তুলে ধরতে হবে। একেকটি পিঠার সাথে নারীর অন্তরে থাকা শৈল্পিক চিন্তার প্রকাশ ঘটে। একটা সময় শীতের মৌসুমজুড়ে গ্রাম-বাংলার বাড়ি বাড়ি ও হাট-বাজারে বাহারি পিঠা তৈরি করতে দেখা যেত। সেই পুরোনো ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায়, এ জন্যই পিঠা উৎসব।

ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো রংপুরে জাতীয় পিঠা উৎসব হচ্ছে। পাঁচ দিনের এ উৎসবে ৩০টি স্টল জুড়ে রয়েছে বাহারি নামের  পিঠার পরসা। উৎসব প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের মন মাতাতে প্রতিদিনই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এই উৎসব থেকে সেরা পাঁচ পিঠাশিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই